বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কখনও ‘বাদশা’ আবার ‘কিং খান’। বলছিলাম সুপারস্টার শাহরুখ খান এর কথা! এক নামে তাকে চেনেন না এমন কোন মানুষ নেই। কয়েক শতাব্দী ধরে বলিউড জগতে শাসন করে চলেছেন তিনি। তার অভিনয় ও প্রতিভা মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। চলুন না, আজ এই বিখ্যাত অভিনেতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

শাহরুখ খানের জন্ম ও শৈশব:
বলিউডের বাদশা খ্যাত শাহরুখ খান ১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মীর তাজ মোহাম্মদ এবং মা ছিলেন লতিফ ফাতিমা।
কিং খান দিল্লির সেন্ট কলম্বা স্কুলে পড়াশুনো করেন এবং তিনি একাডেমিক, খেলাধুলো, নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাকে ‘সোয়ার্ড অফ অনার’ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত অভিনন্দন জানানো হয়। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত হানসরাজ কলেজে পড়াশুনা করেন। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে। ১৯৮৮ সালে কলেজ থেকে স্নাতক স্তরে ডিগ্রী অর্জন করার পর তিনি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
তার বাবা মা মারা যাওয়ার পর তিনি ১৯৯১ সালে মুম্বাইয়ে চলে যান এবং বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে যোগদান করেন। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মজীবন শুরু করার আগে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা’ তে যোগ দেন।
অভিনয় জীবন:
শাহরুখ খান ১৯৮৮ সালে ‘দিল দরিয়া’ নামক একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মাধ্যমে প্রথম অভিনয় জগতে পা রাখার সুযোগ পান। ১৯৮৯ সালে আরেকটি ‘ফৌজি’ নামক সিরিজ লঞ্চ করা হয় এবং সেখান থেকে তার টেলিভিশন জগতে নাম ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ই ‘উমিদ’ এবং ‘ওয়াগেল কি দুনিয়া’ নামে টেলিভিশন শো করেন। পাশাপাশি ‘ইন হুইচ এনি গিভস ইট দোস ওয়ানস’ নামে টেলিফিল্ম করেন।

এরপর পরিচালক মানি কুলের সিরিজ ‘ইডিয়ট’ ছবিতে অভিনয় করে ‘ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে’ যোগ দেওয়ার স্বপ্নে মুম্বাইয়ে চলে যান। ওই একই বছর তিনি চারটি ছবিতে স্বাক্ষর করেন। প্রথমে ‘দিল আসান হ্যায়’ ছবিতে হেমা মালিনীর বিপরীতে অভিনয় করেন। পরিবর্তী সিনেমা ‘দেওয়ানা’ ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিটির পর থেকে তার অভিনয় সবার মনে জায়গা করে নেয়। এই সিনেমাটির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রাপ্ত হন এবং তারপর থেকে নিজের প্রতিভার জন্য তাকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি। এরপর একের পর এক হিট ছবি করে তিনি প্রচুর ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালে ‘ডার’ এবং ‘বাজিগর’ সিনেমায় তাকে খল নায়কের ভুমিকায় দেখা যায়। ১৯৯৫ সালে একটি ব্লকবাস্টার মুভি রাকেশ রোশনের পরিচালিত ‘করন অর্জুন’ সিনেমায় সুপারস্টার সালমান খানের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছিলেন। এই মুভিটি মুক্তি পাওয়ার পর জনগণের মাতামাতির শেষ ছিল না। আজও মানুষের মনে এই সিনেমাটি গেঁথে রয়েছে।
১৯৯৫ সালটি কিং খানের ক্যারিয়ারের জন্য ছিল ট্রার্নিং পয়েন্ট। কারণ, ঐ সালে তার বিখ্যাত সিনেমা যশ রাজের ফিল্ম ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। আর এই সিনেমার কথা নতুন করে বলার বাকি রাখে না। কারণ আজও এই সিনেমাটি এভার গ্রিন। বক্স অফিসে তুমুল সাড়া পেয়েছিল এই ব্লকবাস্টার মুভিটি এবং জনগণের থেকে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেছিল। বলিউড জগতের পূর্ববর্তী সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছিল। তাই এই মুভিটি ‘সর্বকালীন ব্লকবাস্টার’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মুভি হলগুলোতে এই সিনেমাটি চলে।
১৯৯৬ সালটি শাহরুখ খানের জন্য উপযুক্ত বছর ছিল না। কারণ এই বছরে তার সিনেমা ‘আর্মি’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি ম্যান’ এবং ‘ চাহাত’ বক্স অফিসে সেরকম সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি।
১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তার মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমাগুলো যেমনঃ পারদেস, দিল তো পাগল হ্যায়, ডুপ্লিকেট, দিল সে, কুচ কুচ হোতা হ্যায়, বাদশাহ সিনেমাতে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং ভারতীয় ফিল্ম জগতে একজন আইকন হয়ে ওঠেন। ১৯৯৯ সালে তিনি প্রযোজক রূপে সম্মুখে আসেন এবং জুহি চাওলার সঙ্গে প্রোডাকশন হাউস প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রোডাকশন হাউসের প্রথম মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্থানি’। যেখানে জুহি চাওলার বিপরীতে শাহরুখ খানকে দেখা যায়। কিন্তু ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি।
তারপর যশ রাজ ফিল্ম ‘মহব্বাতে’ মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবির বড় পাওয়া ছিল ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। এই সিনেমাটি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল। ২০০১ সালে ধর্মা প্রোডাকশন আয়োজিত করণ জোহারের পরিচালিত ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। এই পারিবারিক সিনেমাটি পাঁচ বছরের জন্য সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক বক্স অফিস সংগ্রহ করে।

একই বছরে মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘আশোকা’ যা একজন বিখ্যাত সম্রাটের জীবনের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই ছবিটিও বক্স অফিসে ফ্লপ হয়েছে। ‘ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল’ এবং ২০০১ টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে দর্শকের কাছ থেকে তিনি স্ক্রিনিং পেয়েছিলেন। ২০০২ সালে কিং খানের মুক্তি পাওয়া ছবি সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত ‘দেবদাস’ দর্শকের কাছে প্রশংসা পেয়েছিল। এই মুভিতে কিং খানের অভিনয়ও অনেক কৃতজ্ঞতা অর্জন করেছিল।
২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত কিং খানের ব্লকবাস্টার মুক্তি প্রাপ্ত ছবিগুলি হল ‘কাল হো না হো’, ‘চলতে চলতে’,’বীর- জারা’, ‘স্বদেশ’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘ডন’, ‘ওম শান্তি ওম’।

এরপর একের পর এক তিনি হিট মুভি ভক্তদের দিয়ে গেছেন। ২০১০ সালে তার সিনেমা ‘মাই নেম ইজ খান’ ভালো প্রশংসা পেয়েছিল। এই সিনেমাটি বৈদেশিক বাজারে সব রেকর্ড ভেঙ্গে বিদেশি বাজারে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে।
২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালে পর্যন্ত কিং খানের মুক্তি প্রাপ্ত ছবিগুলি হল ‘রা-ওয়ান’, ‘ডন ২’, ‘জব তক হ্যায় জান’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’,’হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এবং ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘ডিয়ার জিন্দেগী’, ‘ডন ৩’, ‘ফ্যান’, ‘দিলওয়ালে’, ‘জিরো’ ইত্যাদি।
শাহরুখ খানের পারিবারি জীবন:
১৯৯১ সালে ২৫ অক্টোবর সুপারহিরো শাহরুখ খান তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী গৌরি চিব্বার সঙ্গে বিয়ে করেন। বর্তমানে তার দুটি পুত্র সন্তান এবং একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আব্রাম এবং আরিয়ান তার দুই পুত্র সন্তান এবং কন্যা সুহানা খান। আরিয়ান কিং খানের বড় পুত্র, ১৯৯৭ সালে যার জন্ম হয়। সুহানা খান জন্মগ্রহণ করেন ২০০০ সালে এবং ২০১৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন আব্রাম।

অভিনয় জীবনের সম্মাননা অর্জন:
বলিউড কিং খান তার জীবনে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৫ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পদ্মশ্রী অর্জন করেন। তিনি বহু বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। এছাড়াও আইফা পুরস্কার, স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস, বলিউড মুভি অ্যাওয়ার্ডস, জি সিনে পুরস্কার, গ্লোবাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।