চকলেট ছাড়া তো ছোটদের চলেই না! শুধু ছোটরা কেন? বড়রাও এটি খেতে খুব পছন্দ করে। আজকাল যেকোনো উপলক্ষ মানেই চকলেট আদান প্রদান। আবার বিশেষ করে একটি দিনও পালন করা হয় ‘চকলেট দিবস’ হিসেবে।
বিশেষত ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্য সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে। কখনো প্রে’মিক তার প্রেয়সীর মান ভাঙায় ডার্ক চকোলেটের বিনিময়ে, কখনো বা ছোট্ট শি’শুর মুখে তার বাবা হাঁসি আনে ডার্ক চকোলেট দিয়ে। নামটা তো ডার্ক চকোলেট, কিন্তু এর পেছনের গল্পটা?
হ্যাঁ, গল্পটা নামের চেয়েও অনেক বেশি আঁধারে বেষ্টিত! আপনি জানেন কি এতো ইয়াম্মি চকলেটের গন্ধটাও অনেকের জীবনের জন্য এক অ’ভিশাপ? না, তাদের একদমই ইচ্ছে নেই এই চকোলেটের সংস্প’র্শে থাকার। বরং তারা পালাতে চায় ওই তথাকথিত চকলেটি দুনিয়া থেকে!
আফ্রিকার ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন শি’শু পালাতে পারে না তাদের বিভৎস শৈশব থেকে! তাদের শৈশবের বলিদানই হলো ডার্ক চকলেট! আইভরি কোস্ট আর ঘানা। পশ্চিম আফ্রিকার এই দু’টি দেশে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ কোকো (ডার্ক চকলেটের মূল উপাদান) চাষ করা হয়।
প্রতিদিনই মালি, বুরকিনা, ফাসো ইত্যাদি প্রতিবেশি দেশ থেকে হাজার হাজার শি’শু পাচার করা হয় আইভরি কোস্ট আর ঘানাতে। চকলেট ফার্মে কাজ করানোর জন্য তাদের কিনে আনা হয়। কখনো খাবার বা পড়াশোনার লো’ভ দেখিয়ে এদের কিনে পাচার করা হয়।
জানেন কি এদের শৈশবের মূল্য ওদের পরিবারের কাছে মাত্র কয়েক ডলার? কাজের ধরন? সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই শি’শুগুলো অমানুষিক পরিশ্রম করে। খাদ্য হিসেবে পায় সস্তা সেদ্ধ ভুট্টা আর কলা। রাতে শেকল দিয়ে বেঁধে দরজা জানালাহীন কাঠের আস্তাবলে ফেলে রাখা হয় যাতে তারা পালাতে না পারে।
এই অ’ত্যাচার থেকে কেউ পালানোর চেষ্টা করলে তার কপালে জোটে বেধড়ক মা’র আর যৌ’ন হয়’রানি। মা’র খেয়ে বা ধ’র্ষণে কেউ ম’রে গেলে তার শরীরটা ছুঁড়ে দেয়া হয় নদীতে বা কুকুরের মুখে। মায়া ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই সেখানে। রয়েছে শুধু নৃ’শংসতা।
সেই র’ক্ত যেন শুকিয়ে কালো হয়ে আছে পৃথিবী জোড়া ফ্রীজে রাখা ডার্ক চকোলেটে। কোকো ফিল্ডের পোকা, সাপ, বিচ্ছুর কামড়ে অনেক শি’শুই মা’রা যায়, অবশ্য তাতে মালিকদের কিছু যায় আসে না।
দারিদ্রতাই তাদের সুযোগ নেয়ার কৌশল। ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের তো কোনো মজুরি দেয়া হয় না। বড় কোম্পানিগুলো চুপ থাকবে সস্তায় কোকো পাওয়ার আশায়। ইন্টারন্যাশনাল লেবার ল’ সেখানে উপহাস মাত্র।
কোকো ফার্মের ৪০ শতাংশ মে’য়ে শি’শু। তাদের বয়ঃসন্ধি আসে ফার্মেই। সেখানকার মালিক, শ্রমিক, ঠিকাদার এমনকি পু’লিশের যৌ’ন চাহিদা মেটাতে হয় ওদের। যৌ’ন রোগ আষ্টেপৃষ্টে ধরে কোমল শরীরে। পঁচে গলে যায় শৈশব। স্বপ্নেও পোকা আসে, ভ’য়ঙ্কর সব পোকা।
খুবলে খায় চকোলেটি হৃদয়! এই শি’শুগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয় ম্যাশেটি। এটি এমন এক ছুড়ি যা দিয়ে একটি শি’শুকে কয়েক মিনিটে কিমা করা সম্ভব। এই ছুড়িগুলোই শি’শুদের হাতে দেয়া হয় কোকোবিন পেড়ে বস্তায় রাখার জন্য।
কারো আঙুল কাটে, কারো শরীরের বিভিন্ন স্থানে হয় গভীর ক্ষত। ১০০ কেজি বস্তা ওদের পিঠে চাপানো হয়। বিশ্রামের জন্য থামলেই চাবুকের আ’ঘাত। কি ভাবছেন? মধ্যযুগের কোনো বর্বতার কাহিনী এটা? না।
এটা আমাদেরই বিশ্বায়ন, ফেসবুক, ইত্যাদির তথাকতিত আধুনিক পৃথিবীর এক কাহিনী। এই যুগেই ক্রীতদাস প্রথা চলছে এখনো। যেখানে মানবতা দাঁত বের করে উপহাস করে! আর এই গভীর অন্ধকার থেকেই বের হয় আমা’র আপনার প্রিয় ডার্ক চকোলেট!