‘মা’ কথাটার মধ্যে যেন অদ্ভুত এক শক্তি আছে, এমন শক্তি যা সমস্ত বিপদ থেকে সন্তানকে বের করে আনতে পারে। তার সামনে মাথা নোয়াতে হয় কোরোনা কেও। বারে বারে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই কথাই বারবার সামনে এসে।
এবার আরও একবার এই কথা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এক নার্স। ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহে আরজিকর হাসপাতালে। সন্তান জন্মানোর পর স্তন থেকে দুধ নিঃসরণ হচ্ছিল না লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি এক মহিলার।
অন্যদিকে সদ্যজাত সন্তান ক্ষিদেয় কাতর হয়ে কাদছে। শিশুর কাতর কান্না এবং মায়ের অসহয়তা দেখে এগিয়ে এলেন আরেক মা। তিনি সেই হাসপাতালের নার্স, উমা। তিনিই এসে সদ্যজাত কে কোলে তুলে স্তন্যপান করিয়ে তার কান্না থামালেন।
করোনা-ভীতির থেকে তখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল একফোঁটা দুধের জন্য সদ্যজাত শিশুর আকুতি। করোনা আতঙ্কে ওয়ার্ডে উপস্থিত অন্যান্যরা যখন স্তন্যদানে সম্মত হননি, তখন সমস্ত ভয় তুচ্ছ করে এগিয়ে আসেন উমা। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম সার্থক করে জগন্মাতা হয়ে ওঠেন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করেই তিনি শিশুটিকে দুধ খাইয়েছেন। তার স্বামী এই ঘটনায় প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও তাকে আশ্বস্ত করেছেন উমা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই উমাকেই করোনার জেরে প্রতিবেশীদের হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে।
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার সময় তাকে পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছাতে হয়। বৃদ্ধা মা, স্বামী ও তাঁর দুধের শিশু সবাইকেই থার্মাল স্ক্রিনিং করে প্রমাণ দিতে হয়েছিল যে তাঁরা কেউ মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত নন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা উমা অধিকারী নার্স হিসেবে মানুষের সেবায় সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়ে দিলেন। একজন সন্তানের কান্না যে মায়ের জন্য কতটা কষ্টকর হয়ে ওঠে তা অনুভব করেই ডিউটিতে থাকাকালীন ‘দশভূজা’ হয়ে উঠলেন তিনি।
উমার এই মানবিকতায় সহকর্মীরা তো বটেই, চিকিৎসকরাও উচ্ছ্বসিত। উমার সাহসকে যখন সবাই কুর্নিশ জানাচ্ছেন তখন উমা নির্বিকার। পিপিই পরে পরেরদিনের নতুন চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ‘দশভূজা’ মায়ের যে আরও অনেক ওয়ার্ডে ডিউটি।