Breaking News

শেষ হয়ে যাচ্ছে দেশের গ্যাস!

প্রতি মাসেই একটু একটু করে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। আর সেই জায়গা দখল করছে আম’দানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)।

দেশে গত কয়েক বছরে বড় কোনও গ্যাসের মজুত যেমন আবিষ্কৃত হয়নি, ঠিক একইভাবে আগামী কয়েক বছরেও তার কোনও সম্ভাবনাও নেই। কারণ, একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তার কোনোটিই করা হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের উচিত ছিল দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করা। দুঃখজনক হলেও সেখান থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি আম’রা। ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ই’মাম বলেন,

‘যদি বলা হয় দেশে গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে গেছে, তাহলে এই কথাটি একজন ভূতাত্ত্বিক হিসেবে আমি অন্তত মানতে পারি না। আমাদের সম্ভাবনাময় অনেক স্থান রয়েছে। সেখানে আম’রা এখনও অনুসন্ধান কার্যক্রমই চালাইনি।

অবিলম্বে আমাদের উচিত সাগরে অনুসন্ধান চালানো। ভা’রত তার কৃষ্ণা গোদাগাড়ি বেসিন এবং মিয়ানমা’র বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ব্লকে চারটি গ্যাসক্ষেত্র পেয়েছে। সেগুলো থেকে তারা গ্যাস উত্তোলনও করছে। কিন্তু আম’রা সেখানে যেতে পারছি না।’

গত জানুয়ারিতে দেশে মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে গড়ে তিন হাজার ১৬৭ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এরমধ্যে ৫৯২ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। বাকি দুই হাজার ৫৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাস। অন্যদিকে ২৮ জুলাই গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে তিন হাজার ১১৯ মিলিয়ন ঘনফুট।

এখানে এলএনজি ৫৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট, আর দেশীয় গ্যাস দুই হাজার ৫৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে দুই হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর পরে ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকলেও বৃদ্ধির কোনও উদ্যোগ নেয়নি পেট্রোবাংলা। দেশের স্থলভাগে কয়েকটি খনন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর অভ্যন্তরে আর খনন কাজ চালায়নি বাপেক্স।

আর সাগরে অনেক দিন থেকেই সব ধরনের কাজ থমকে আছে। অন্যদিকে চলতি বছর সাগরে নতুন পিএসসি আহ্বানের কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছর করো’নার প্রভাবে নতুন পিএসসি আহ্বান না করার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো।

মিয়ানমা’র বাংলাদেশের সমুদ্রের সীমানায় থাকা তাদের ব্লকে ২০১৭ সালে দুটি, ২০১৮ সালে একটি এবং ২০১৯ সালে একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমা’র যেভাবে সেখানে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিকে আকৃষ্ট করেছে,

একই প্রক্রিয়ায় আমাদের এখানেও করা যেতে পারে। তাহলে ওই এলাকায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমা’র ও ভা’রতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ সুফল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অ’ভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ‘দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি এখনও যেসব সম্পদ আম’রা উত্তোলন করিনি, সেগুলো উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্রসীমায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বৃহৎ পরিসরে চুক্তি করতে ব্যর্থ হলেও তিন বছর ঝুলিয়ে রাখার পর মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে করার জন্য একটি চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

এই কাজটি তিন বছর আগে করা গেলে আম’রা এতদিনে সমুদ্রে তেল-গ্যাস স’ম্পর্কে একটি ধারণা পেতাম। ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোও আগ্রহী হতো। কিন্তু সেই সুযোগও তৈরি করতে পারেনি পেট্রোবাংলা।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানির পরিকল্পনাতেই সমস্যা রয়ে গেছে। আজ আম’রা বেসামাল হয়ে আছি। কয়লার ক্ষেত্রেও আমাদের অবহেলা হয়েছে। দু’র্নীতি হচ্ছে। পুরো জাতীয় সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

যে পরিস্থিতিতে যাচ্ছি তাতে আগামীতে আমাদের সবই আম’দানি করে চলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পলিসি পরিবর্তন করতে হবে। সরকারি কোম্পানিগুলোর কাজে নজরদারি বাড়াতে হবে। দু’র্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।’

About Utsho

Check Also

সেই মা’রিয়াকে নিয়ে খেলায় মা’তলেন ডিসি

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজে’লার হেলতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে পরিবারের সব স্বজন হা’রানো সেই মা’রিয়া সুলতানা এখনও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *