সিলেটের ওসমানীনগরে সন্ধ্যার দেহ উ’দ্ধারের ৮ দিন পর মা’থা উ’দ্ধার করে পু’লিশ। এ ঘটনায় তার পরিচয় না পাওয়া গেলেও ক্লু উ’দ্ধারে তৎপর ছিল পু’লিশ। রাতে সন্ধ্যার স্বামী মোজাম্মেল মিয়াকে গ্রে’প্তার করে পু’লিশ। বুধবার ১৬৪ ধারায় নিজের স্ত্রী’ হ’ত্যায় জ’ড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আ’দালতে জবানব’ন্দি দেন তিনি।






মোজাম্মেল ওসমানীনগরের দক্ষিণ কলারাই গ্রামের মৃ’ত জিলু মিয়ার ছে’লে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। তার স্ত্রী’ সন্ধ্যার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। পর’কী’য়ায় জড়িয়ে পড়ায় তাকে হ’ত্যা করেন মোজাম্মেল। জবানব’ন্দিতে মোজাম্মেল জানান, সন্ধ্যা হিন্দু ধ’র্মাবলম্বী ছিলেন। ভালোবাসার টানে তিনি মু’সলিম ধ’র্ম গ্রহণ করেন। নাম রাখেন শাহানাজ।






এমনকি মোজাম্মেলের পরিবারের সঙ্গেও সন্ধ্যার যোগাযোগ ছিল। তার ব্যবহারে খুশি হয়ে মোজাম্মেলের মা ও আত্মীয়স্বজন তাকে পরিবারের বৌ হিসেবে মেনে নেয়। দুজনের বিয়ের পর থেকে সংসার ভালো চলছিল। মোজাম্মেল জানান,কিছুদিন পর থেকে সন্ধ্যার আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান। বাড়িতে তার মা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার কলহ শুরু হয়।






এ কারণে স্ত্রী’কে অন্য আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে নিজের কাজে যেতেন। এ কারণে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া বাঁধত। জবানব’ন্দিতে তিনি জানান, সম্প্রতি মোহন নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে তার স্ত্রী’র পর’কী’য়ার স’ম্পর্কের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। গত ৩০ নভেম্বর বেলা ১টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা’র চন্ডীপুল থেকে গোয়ালাবাজার যান মোজাম্মেল ও শাহনাজ।






সেখান থেকে ওসমানীনগরের উনিশ মাইল এলাকার আগে নাট’কিলা নামক স্থানে অটোরিকশা থেকে নেমে পড়েন তারা। ধানী জমির মধ্য দিয়ে তারা উনিশ মাইলে মোজাম্মেলের বড় খালা ফুলমতির বাড়িতে রওয়ানা দেন। এর মধ্যে রাত হয়ে গিয়েছিল। জবানব’ন্দিতে মোজাম্মেল জানান, স্ত্রী’কে সঙ্গে নিয়ে তিনি হাওরের (বিল) মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সন্ধ্যা তার সঙ্গে ‘শারীরিক স’ম্পর্ক’ করতে চান। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতির অবস্থা বিবেচনা করে তিনি মানা করেন।






তখন সন্ধ্যা তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। মোজাম্মেল ধমক দিলেও তিনি থামছিলেন না। এ সময় সন্ধ্যা অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলছিলেন। মোহনকে বিয়ে করবেন বলেও হু’মকি দেন। ‘শারীরিক স’ম্পর্ক’ না করলে তাকে ‘আম্মা’ বলে ডাকতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোজাম্মেল স্ত্রী’র পরনের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বা’সরোধ করে হ’ত্যা করেন। লা’শ লুকানোর জন্য স্ত্রী’র বোরকা, জামাকাপড় সব খুলে ফেলেন এবং তার হাতব্যাগ, মোবাইল সবকিছু একটি ছোট ব্যাগে ভরে রেখে দেন।






পরে নিজে উল’ঙ্গ হয়ে শরীরে কাঁদা মেখে উনিশ মাইল বাজারে যান। সেখানে একটি স্টিল কারখানার বাইরে পড়ে থাকা চিকন স্টিলের পাত ও সিমেন্টের দুটি প্লাস্টারের টুকরো তুলে নেন। প্লাস্টারে স্টিলের পাত ঘসে ধারালো করে ফের ঘটনাস্থেলে ফিরে যান মোজাম্মেল। পরে স্ত্রী’র উরু ও পেটে একাধিক কোপ দেন। গলা থেকে মা’থা কে’টে ফেলে কাঁদায় পুঁতে ফেলেন। এ ছাড়া সন্ধ্যার নাক, কান, স্তন কে’টে দেহ ২০০ গজ দূরে নিয়ে ফেলে দেন।






পরে সেখান থেকে সরে এসে পশ্চিম কালারাই গ্রামের দক্ষিণে নাট’কিলা নদীতে ওই স্টিলের পাত ফেলে দেন মোজাম্মেল। মোজাম্মেল মিয়া আরও জানান, এরপর নিজেকে পরিষ্কার করে স্ত্রী’র কাপড়চোপড়, মোবাইল পাশের একটি ইট ভাটার জ্বলন্ত চুলায় ফেলে দেন। পরে ভাগলপুরে নির্জন রাস্তায় ৪০ মিনিট অ’পেক্ষা করে ফজরের আজানের পর বাস যোগে সিলেটে তার খালার বাসায় চলে যান।
এদিকে সন্ধ্যার দেহ ও মা’থা উ’দ্ধারের পর তা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। হ’ত্যাকা’ণ্ডের র’হস্য উদঘাটনে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করে পু’লিশ। কমিটিতে সিলেটের পু’লিশ সুপার মোহাম্ম’দ ফরিদ উদ্দিন, অ’তিরিক্ত পু’লিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মোহাম্ম’দ সাইফুল ইস’লাম ও অ’তিরিক্ত পু’লিশ সুপার (সদর) মো. লুৎফুর রহমান ছিলেন।
ওসমানীনগর থা’নার ভা’রপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘মোজাম্মেলকে গ্রে’প্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কলহের কারণে স্ত্রী’কে হ’ত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে আ’দালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দিতে হ’ত্যাকা’ণ্ডের বর্ণনা দেন।’
সিলেটের অ’তিরিক্ত পু’লিশ সুপার আমিনুল ইস’লাম জানান, মোজাম্মেলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক।