এক-দুই কোটি টাকা নয়, ৫০ কোটি টাকা কামিয়েছে গত কয়েক বছরে। ঢাকায় দুটি ছয় তলা বাড়ি, তিনটি গাড়ি, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ অনেক কিছুই করেছে সে। এসবই করেছে মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁ’স করে। তার নাম জসিম।






পু’লিশের অ’প’রাধ ত’দন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর হাতে গ্রে’ফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্ন ফাঁ’স করে অ’বৈধ উপায়ে উপার্জিত তার এসব সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। সিআইডির কর্মক’র্তারা বলছেন, জসিমের অ’বৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।






অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং আইনে তার বি’রুদ্ধে মা’মলা দায়ের করা হবে। গত ১৯ ও ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁ’স চক্রের সদস্য সানোয়ার হোসেনকে গ্রে’ফতার করে সিআইডি।






পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া ওরফে মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু ও মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন নামে চার জনকে গ্রে’ফতার করা হয়। তাদের বি’রুদ্ধে সিআইডির এসআই প্রশান্ত কুমা’র সিকদার বাদী হয়ে মিরপুর থা’নায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে একটি মা’মলা দায়ের করেন।






গ্রে’ফতার হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে জসিম, পারভেজ ও জাকিরকে সাত দিনের রি’মান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। বাকি দুজন আ’দালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দিয়েছে। সিআইডির সিনিয়র সহকারী পু’লিশ সুপার সুমন কুমা’র দাশ বলেন, ‘গ্রে’ফতার চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁ’স করে আসছিল।






এই চক্রের মূল হোতা হলো গ্রে’ফতার হওয়া জসিম ও তার খালাতো ভাই সালাম। সালাম বর্তমানে পলাতক। তাকে গ্রে’ফতারের জন্য অ’ভিযান চালানো হচ্ছে।’ সিআইডির এই কর্মক’র্তা জানান, গ্রে’ফতার হওয়া জসিম প্রশ্ন ফাঁ’স করে অর্ধ শত কোটি টাকা কামিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।






সিআইডি সূত্র জানায়, গ্রে’ফতার হওয়া জসিমের খালাতো ভাই আব্দুস সালাম স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসে মেশিনম্যান হিসেবে কাজ করে। সালামের মাধ্যমে জসিম সারাদেশে প্রশ্নফাঁ’সের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। একসময় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আলীকোতে কাজ করা জসিম প্রশ্ন ফাঁ’স করে কোটি কোটি টাকা আয় করে।






গ্রে’ফতারের সময় তার কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক উ’দ্ধার করা হয়েছে। সিআইডির কর্মক’র্তারা জানান, জসিম উদ্দিন ভুঁইয়ার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থা’নার জয়মন্টব ইউনিয়নের খানবানিয়ারা গ্রামে। পারিবারিকভাবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা জসিম ঢাকায় খালাতো ভাই সালামের সঙ্গে ’৯০-এর দশক থেকেই প্রেসে যাতায়াত করতো।






সেখান থেকেই একপর্যায়ে দুই ভাই মিলে প্রশ্নফাঁ’সের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। জসিম তার সহকর্মীদেরও এই প্রশ্নফাঁ’স সিন্ডিকে’টে কাজে লাগিয়ে ছাত্র জোগাড় করতো। এর আগে ২০১১ সালে ও ২০১৫ সালে দুই দফায় র্যা’বের হাতে প্রশ্নফাঁ’সের অ’ভিযোগে গ্রে’ফতার হয়েছিল সে। কিন্তু জে’ল থেকে ছাড়া পেয়ে আগের কাজেই ফিরে যায়।
সিআইডির ত’দন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশ্ন ফাঁ’স করে জসিম গত কয়েক বছরে মিরপুরে দুটি ছয় তলা বাড়ি করেছে। মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের শাহআলী এলাকার এইচ ব্লকের ১ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর পৃথ্বী ভিলা ও ৪৫ নম্বর শাম্মি মঞ্জিল নামে দুটি ছয় তলা বাড়ি রয়েছে তার। এছাড়া মিরপুর এলাকায় শাম্মি ফ্যাশন্স নামে একটি গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। ভুঁইয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর একটি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার। নিজের মালিকানায় তিনটি গাড়িও রয়েছে জসিমের।
সিআইডির কর্মক’র্তারা জানান, একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে এত অর্থ কী’ভাবে আয় করেছে তার কোনও সঠিক জবাব দিতে পারেনি জসিম। তার স্থাবর-অস্থাবর আরও সম্পত্তির খোঁজ করা হচ্ছে। সম্পত্তির অনুসন্ধান শেষে তার বি’রুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মা’মলা দায়ের করা হবে। একই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁ’স করে আয় করা অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি হেফাজতে নেওয়ার জন্যও আবেদন করা হবে।
সিআইডি সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁ’স করে জসিম যাদের কাছে তা বিক্রি করেছে এবং যারা ফাঁ’স হওয়া প্রশ্নের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। এখন পর্যন্ত শোভন নামে একজন খুলনা মেডিক্যাল কলেজে, মাহমুদা পারভীন ঋতু নামে একজন বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে, রিয়াদ নামে একজন সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ও মুবিন নামে একজন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে বলে সিআইডির কর্মক’র্তারা তথ্য পেয়েছেন।
সিআইডির দায়িত্বশীল একজন কর্মক’র্তা জানান, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা ফাঁ’স হওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।