Breaking News

বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ভু’য়া করো’না সার্টিফিকেটের খবর, বিপাকে প্রবাসীরা

ইন্দোনেশিয়া থেকে ইতালি, আমেরিকা থেকে আফ্রিকা- সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে এ সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি খবরই বড় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে- ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নাটকীয় গ্রেপ্তা’রের ঘটনা। করো’নাভাই’রাস মহা’মারি শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে যত খবর এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, তার কোনটিই সম্ভবত এত বেশি গুরুত্ব পায়নি। খবর বিবিসি বাংলার।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস এ নিয়ে যে খবরটি প্রকাশ করে তার শিরোনাম, ‍‘বিগ বিজনেস ইন বাংলাদেশ: সেলিং ফে’ইক করো’নাভাই’রাস সার্টিফিকেটস।’ অর্থাৎ বাংলাদেশে জাল করো’নাভাই’রাস সার্টিফিকেট নিয়ে বিরাট ব্যবসা ফাঁদা হয়েছে।নিউইয়র্ক টাইমসের এই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে এই ধরনের সার্টিফিকেটের একটা বড় বাজার আছে। কারণ ইউরোপে কাজ করে যেসব বাংলাদেশি, তারা সেখানে ফিরে যেতে উদগ্রীব। এই অভিবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে মুদির দোকান, রেস্তোরাঁয় কাজ করে বা রাস্তায় পানির বোতল বিক্রি করে।

যেসব বাংলাদেশি ইতালিতে কাজ করেন, তাদের চাকরিস্থলে মালিকরা তাদের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার আগে এরকম সার্টিফিকেট চাইছেন।কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভশনে এবং তাদের ইংরেজি ওয়েবসাইটেও এই খবরটি বড় করে প্রচার করা হয়েছে। আল জাজিরার খবরের শিরোনাম ছিল, ‍‘বাংলাদেশ অ্যারেস্টস হসপিটাল ওনার ওভার ফে’ইক করো’নাভাই’রাস রেজাল্টস।’ এই খবরটির ব্যাপারে ইতালির সংবাদমাধ্যমের ছিল বাড়তি আগ্রহ। ইতালির একটি পত্রিকায় বড় করে কয়েক কলামে প্রকাশিত শিরোনামটির অনুবাদ অনেকটা এরকম: ‘জা’ল সার্টিফিকেটের কল্যাণে ইতালিতে করো’নাভাই’রাস পজিটিভ বাংলাদেশি।

চাঞ্চল্যকর গ্রেপ্তা’র: হ্যা’ন্ডকাফ পরে জে’লখানায়।’বাংলাদেশ থেকে করো’নাভাই’রাস নিয়ে ইতালিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে আগে থেকেই বেশ আলোচনা ছিল। এর মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে জাল করো’নাভাই’রাস সার্টিফিকেট ইস্যু করা এবং এই হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদকে গ্রেপ্তা’রের খবর স্বাভাবিকভাবেই ইতালির গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়।ইন্দোনেশিয়ার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশে হাসপাতাল মালিকরা হাজার হাজার ভু’য়া কোভিড-১৯ টেস্ট করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’ কয়েক কলাম জুড়ে এই শিরোনামের সঙ্গে ফলাও করে ছাপা হয়েছে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়া মো. সাহেদের ছবি।

শুধু মো. সাহেদের খবর নয়, বাংলাদেশে করো’নাভাই’রাস টেস্ট কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তা’রের খবরও আছে অনেক সংবাদপত্রে।স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত একটি নিউজ পোর্টাল নটিমেরিকার শিরোনাম: ‍‘হাজার হাজার ভু’য়া করো’নাভাই’রাস টেস্ট করার দায়ে হাসপাতাল মালিক গ্রেপ্তা’র।’ এই শিরোনামের নিচের ছবিটি অবশ্য জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর।ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় বাংলাদেশে ভু’য়া করো’নাভাই’রাস টেস্টের জের ধরে হাসপাতাল মালিকের গ্রেপ্তা’রের খবর।

একটি ভারতীয় সংবাদ চ্যানেল উইয়নে এই খবরে বলা হয়, নয়দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর মো. সাহেদকে বাংলাদেশের পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়। রোগীদের পরীক্ষা না করেই তাদেরকে করো’নাভাই’রাসমুক্ত সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধবিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে করো’নাভাই’রাস পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতির খবর যেরকম ফলাও প্রচার পেয়েছে, তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ এসব দেশে। ইতালিতে বসবাসরত একজন বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট এ কে জামান বলেন, ইতালির সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরাখবরে বাংলাদেশিদের দায়ী করা হচ্ছে ইতালিতে নতুন করে করো’নাভাই’রাস নিয়ে আসার জন্য। বলা হচ্ছে, প্রবাসী বাংলাদেশি যারা ফেরত এসেছে, তারাই ইতালিতে করো’নাভাই’রাস নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা যখন চলাফেরা করি, বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে, অন্যরা আমাদের দেখে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আগে যেসব বার বা রেস্তোরাঁয় আমরা যেতাম, সেখানে লোকে যেন আমাদের দেখে ইতস্তত বোধ করে।ইতালির ফ্রিউলি ভেনেজিয়ে জুলিয়া প্রদেশের ত্রিয়েস্ত শহরে থাকেন আইরিন পারভীন খান। তিনি জানান, ইতালিতে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের জন্য বাংলাদেশিদের দায়ী করা হচ্ছে। ইতালিতে যখন প্রথম করো’নাভাই’রাস ছড়িয়েছিল, তখন চীনাদের সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করা হতো, এখন বাংলাদেশিরা সেই একই ধরনের ব্যবহারের শিকার হচ্ছে।আইরিন পারভিন খান জানান, তার শহরের কাছাকাছি এক শহরে ৩৬ জনের করোনা’ভাইরা’স ধরা পড়েছে, এদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি।

এরপর এখন বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর দাবি পর্যন্ত তুলছে অনেকে। করো’নাভাই’রাস নিয়ে কেলেংকারির খবর ইতালির পত্রিকায় ফলাও প্রচার পাওয়ার পর বাংলাদেশিদের ওপর হা’মলা এবং দুর্ব্যবহারের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলেন তিনি।আইরিন পারভিন খান বলেন, মিলানে এক বাংলাদেশি ফুল বিক্রেতাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা যদি কোনও ইতালিয়ানের সঙ্গে করা হতো, এতক্ষণে পুলিশ অনেক কিছুই করতো। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। আমার পরিচিত এক বাংলাদেশি নারী সুপারশপে গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে।

সেখানে তিনি সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের নিয়মকানুন মেনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও সেই নারী দুর্ব্যবহারের শিকার হন‍‍‍।তিনি আরও বলেন, ইতালিয়ান সংবাদপত্রগুলোর ওয়েবসাইটে খবরের নিচে যেসব কমেন্ট বা মন্তব্য থাকে, সেগুলো পড়লেই বোঝা যায়, বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ কতটা বেড়েছে।

About Utsho

Check Also

সৌদি যুবরাজের মনোরঞ্জনে ১৫০ মডেল, বুক করা হয়েছিল বিলাসবহুল রিসোর্ট

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে সম্প্রতি একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *