বিবাহবহির্ভুত সন্তান জন্ম’দানে ইউরোপের দেশগুলোতে শীর্ষে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে ১০০ শি’শুর মধ্যে ৬০ জনের বাবা-মা বিয়ে ছাড়াই তাদের সন্তান জন্ম দেন। পরিবার গঠন, সন্তান জন্ম’দান এবং লালন-পালনের জন্য বিয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি।






কিন্তু পশ্চিমা আধুনিক সভ্যতায় সেই ঐতিহ্য দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে। যার প্রমাণ মিলে পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্টেটের এক জ’রিপে। ২০১৮ সালে ইউরোপে বিবাহবহির্ভূত সন্তান জন্ম দেয়ার হার দাঁড়ায় ৪২ শতাংশ। ২০০০ সালে এ হার ছিল ২৫ শতাংশ। গেলো ১৮ বছরে বিয়ে ছাড়া সন্তান জন্ম দেয়ার হার বেড়েছে ১৭ শতাংশ।






বর্তমানে ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে জন্ম গ্রহণ করা শতকরা ৪২টি শি’শুর বাবা-মা বিয়ে ছাড়া সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। ইউরোপের ২৬টি দেশের মধ্যে জ’রিপটি পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক লুৎফুর রহমান বাবু বলেন, অবাধ মেলামেশার জন্য ফরাসীরা বিয়ের স’ম্পর্কে জড়ায় না।






এক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও কোনো বাধা নেই। বিয়ের পর আলাদা হতে চাইলে স্ত্রী’কে সম্পদের অর্ধেক দিতে হয়। সন্তান থাকলে আরো বেশি। সন্তান তার মায়ের কাছে থাকার আইনি অধিকার পায়। এ কারণে সন্তান জন্ম’দানে সক্ষমতা থাকা অবস্থায় বৈবাহিক স’ম্পর্ক গড়ে উঠে কম।’






ফ্রান্সের পরই আছে বেলজিয়াম। সেখানে ৫৮ দশমিক ৫ দশমিক শি’শুর মা-বাবা পরস্পর স্বামী-স্ত্রী’ নয়। স্লো’ভেনিয়া ও পর্তুগালে এ হার ৫৭ দশমিক ৭ এবং ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ। পর্তুগাল প্রবাসী বাংলাদেশি তারিকুল হাসান আশিক বলেন, দু’জনের মধ্যে সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে পারার মতো মানসিক মিল খুঁজে পেলে কেবল তারা বিয়ের চিন্তা করে।






ক্যারিয়ারের জন্য বিয়েতে জড়ায় না অনেকে। বিয়ে ছাড়া, নারী-পুরুষের স’ম্পর্ক বিচ্ছেদে আইনি ঝামেলাও নেই। বনাবনি হলো না ছেড়ে দিলো। আর সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্র। বিয়ে ছাড়া স’ম্পর্কে সন্তান থাকলে শুধু অ’ভিভাবকত্বের বিষয়টি সুরাহা হলেই আর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না।’






সুইডেন, ডেনমা’র্ক, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডসেও এ হার ৫০ শতাংশের উপরে। বেলজিয়াম, চেচনিয়া স্পেন, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়ায় জন্ম নেয়া শি’শুদের ক্ষেত্রে এ হার ৪০ শতাংশের বেশি। এ তালিকায় ১৯ নম্বরে ইতালি। দেশটিতে ৩৪ শতাংশ শি’শুদের বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী’ নয়। জার্মানিতে এ হার ৩৩ শতাংশ। জ’রিপ অনুযায়ী ইউরোপে দেশটির অবস্থান ২০ নম্বরে। ইউরোপে তুলনামূলক জার্মানিতে বিয়ে ছাড়া সন্তান জন্ম’দানের হার কিছুটার কম।
এ বিষয়ে জার্মান প্রবাসী বাংলাদেশি বিটু বড়ুয়া বলেন, বিয়ে ছাড়া সন্তান জন্ম’দানকে আদি জার্মানরা অ’নৈতিক মনে করে। সন্তান পালনের জন্য শুধু মা কিংবা যথেষ্ট নয়। স্বামী-স্ত্রী’ দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে সন্তান লালনে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তারা। ক্যারিয়ার সচেতন হওয়ায় বিয়ের আগে সন্তান নিয়ে একা শি’শু লালন-পালনের ঝুঁ’কিও নিতে চায় না জার্মানরা।’
এছাড়া, বিয়ের পর সন্তান নিলে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয় জার্মান সরকার। বিবাহিতদের চাকরি পেতে অন্যদের তুলনায় গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। সন্তান থাকলে গুরুত্বের পাশাপাশি সরকার ভাতা দেয়। বাড়ি পেতে সুবিধা হয়। ২ বছর মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া যায়। যা বিয়ে ছাড়া সম্ভব নয়। বলেন বিটু বড়ুয়া।
ইউরোপের আরেক দেশ রোমানিয়া এ হার ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ। লিথুনিয়া, পোল্যান্ড, ক্রোশিয়া, সাইপ্রাসে জন্মগ্রহণকারী ২০ শতাংশের বেশি শি’শুর বাবা-মা, স্বামী স্ত্রী’ নয়। গ্রিসে এ হার সবচেয়ে কম। মাত্র ১১ দশমিক ১ শতাংশ।