রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছা’ত্রী তিনি। ভালোবাসেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রকে। তাদের দুইজনের বাড়িই রংপুরে।
একই কলেজে পড়ার সুবাধে তাদের মধ্যে গড়ে উঠে প্রে’মের স’ম্পর্ক। সময় পেলেই একে অন্যের কাছে ছুটে যেতেন। এভাবেই তাদের এ ভালোবাসা গড়ায় শারীরিক স’ম্পর্কে।
এ বছরের শুরুতে তাদের সামনে নেমে আসে কালো ছায়া। প্রে’মিকা বুঝতে পারেন গর্ভধারণ করেছেন। তার বয়ফ্রেন্ডকে জানালে তিনিও চিন্তিত হয়ে পড়েন।
এমন ঘটনা জানাজানি হলে সমাজে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেন না। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন গর্ভপাত ঘটানোর। দুজনই চলে আসেন ঢাকায়। স্বামী-স্ত্রী’ পরিচেয়ে ভর্তি করা হয় রাজধানীর স্বনামধন্য একটি হাসপাতা’লে।
কিন্তু তাতে বাদ সাধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা কোনো ধরনের গর্ভপাত করান না। চোখে-মুখে অন্ধকার যেন ভর করছে তাদের ওপরে। কূলকিনারা না পেয়ে হাসপাতা’লেরই আয়া মাহফুজা খানমের দেয়া ঠিকানা মতে কল্যাণপুরের এক ক্লিনিকে যান।
এ মাহফুজাই দালালের ভূমিকা পালন করেন ওই ক্লিনিকের। কল্যাণপুরে এ ক্লিনিকে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে নাদিয়ার গর্ভপাত করানো হয়। গর্ভপাতের পর ওই প্রে’মিকা মা’রাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁ’কিতে পড়েন।
প্রচুর র’ক্তক্ষরণের ফলে তিনদিনে ১০ ব্যাগ র’ক্ত দিতে হয় তাকে। শুধু এই প্রে’মিক জুটিই নন। এরকম হাজারো জুটি অনিরাপদভাবে গর্ভপাত ঘটান দেশে। শুধু অ’বৈধ গর্ভপাত নয়, স্বামী এবং স্ত্রী’র ভুলে গর্ভধারণ করা দম্পতিও গর্ভপাত ঘটাচ্ছে অহরহ।
এভাবে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে কেউ কেউ মৃ’ত্যুর কোলে ঢলে পরেন। মৃ’ত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসার অ’ভিজ্ঞতাও রয়েছে কারো। অনেকে আবার পরবর্তীতে আজীবনের জন্য মাতৃত্বের স্বাদ হারান।
রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে এমন অসংখ্য হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। যেখানে গর্ভপাত ঘটানো হচ্ছে। বেআইনি এ কাজ করেন হাতুড়ে ডাক্তার, নার্স এমনকি ক্লিনিকের আয়া।
বৈধতা না থাকায় গর্ভপাত করাতে তাদের গুনতে হয় বড় অঙ্কের টাকা। অথচ দেশের আইনে গর্ভপাত দ’ণ্ডনীয় অ’প’রাধ। বাংলাদেশে বছরে কত সংখ্যক গর্ভপাত হয় তার একটি জ’রিপ করছে যু’ক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুতম্যাকার ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশে তাদের সঙ্গে গবেষণার কাজটি করেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অব সেপটিক অ্যাবরশন বাংলাদেশ (বাপসা)। তারা মাঠপর্যায়ে গর্ভপাতের ওপর একটি জ’রিপ চালায়। গুতম্যাকার ইনস্টিটিউট চলতি বছরের মা’র্চে তা প্রকাশ করে।
এ জ’রিপে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ১১ লাখ ৯৪ হাজার অনিরাপদ গর্ভপাত হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে দিনে ৩ হাজার ২৭১টি গর্ভপাত করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৪ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে বছরে হাজারে ২৯ জন গর্ভপাত করান। গর্ভপাতের হার খুলনা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বনিম্ন।