Breaking News

‘বান্দার সঙ্গে আল্লাহর কথোপকথনের মুহূর্ত’

পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ১১২টি সূরার নামকরণ করা হয়েছে ওই সূরার কোনো একটি শব্দ দিয়ে। মাত্র দুটি সূরা এর ব্যতিক্রম। একটি হলো- ‘ইখলাস’ যে শব্দটি সূরার মধ্যে নেই, আর অন্যটি সূরা ফাতিহা। ‘ফাতিহা’ শব্দটি এই সূরার কোথাও নেই।

ফাতিহা শব্দের অর্থ খোলা, সূচনা কিংবা উদ্বোধন করা। এই সূরার মাধ্যমে বান্দা নামাজে তার রবের সঙ্গে সম্পর্কের সূচনা করেন। এই সূরার দ্বারা মহান আল্লাহর বিধি-বিধান, হুকুম-আহকাম, হালাল-হারামসহ যাবতীয় দিক-নির্দেশনার ভাণ্ডার কোরআন শুরু হয়েছে। আর এ কারণেই সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে- সূরাতুল ফাতিহা। একই কারণে সূরাটি প্রথমে কোরআনের প্রথমে স্থান দেওয়া হয়েছে।

সূরা ফাতিহা নাজিলের সময়কাল
নবুওয়তের প্রথম দিকে মক্কায় এই সূরাটি নাজিল হয়। পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে এই সূরাটি প্রথম নাজিল হয়েছে। হজরত জিবরাইল আলাইহি সালাম হেরা গুহায় সর্বপ্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর সূরা মুদ্দাসসির এবং সূরা মুজাম্মিলের প্রথমদিকের আয়াতগুলো নাজিল। এভাবে কয়েকটি সূরার অংশ নাজিলের পর হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহির সঙ্গে যখন পরিচিত হলেন- তখন পরিপূর্ণ সূরা হিসেবে সূরাতুল ফাতিহা নাজিল হয়।

সূরা ফাতিহার বিষয়বস্তু
সূরা ফাতিহা মূলত একটি দোয়া। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা মানুষকে এই দোয়া শিক্ষা দিয়ে, জানিয়ে দিয়েছেন সত্যপথের সন্ধান লাভের জন্য এ কিতাবটি পড়তে হবে। এ সূরায় শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে, মানুষ ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার জন্য কী করবে, কার কাছে চাইবে এবং কীভাবে চাইবে।

এ সূরার সারমর্ম বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় কিংবা বৈশ্বিক সবখানেই বান্দার অবস্থান কোথায় তা জানা দরকার। বান্দার ভেতর থেকেই এর জবাব পাওয়ার চেষ্টা যদি থাকে; তবে সূরা ফাতিহা এ জিজ্ঞাসার তৃষ্ণা নিবারণে মহাসমুদ্রের মতো তার সামনে এসে হাজির হয়।

একজন মোমিন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ৩২ বার সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করে। তার পরও যদি সে, সঠিক ও সরল পথে সন্ধান না পায়, তার আচার-আচরণে পরিবর্তন না হয়- তাহলে এই নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াদের সার্থকতা কোথায়? সঠিক আখলাকের অনুসরণ করাই সূরা ফাতিহার সিরাতুল মুস্তাকিম বা সরলপথ।

সূরা ফাতিহার নামসমূহ
সহিহ হাদিসে এ সূরাকে উম্মুল কোরআন ও উম্মুল কিতাব বা কোরআনের সার বলে অভিহিত করা হয়েছে। গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক দিয়ে এ সূরাটির ত্রিশটিরও বেশি নাম রয়েছে। যেমন- ফাতিহাতুল কিতাব বা গ্রন্থের প্রারম্ভিকা, যে কথা অধিক গুরুত্ব রাখে, স্বভাবতই তা শীর্ষস্থান অধিকার করে থাকে। সাবউল মাসানি বা নিত্যপাঠ্য বাণীসপ্তক, সূরাতুল কাফিয়া বা সম্পূরক সূরা, সূরাতুল কানয বা অনন্য ধনভাণ্ডার, আসাসুল কোরআন বা কোরআনের ভিত্তি, সূরাতুল হামদ বা প্রশংসার সূরা, সূরাতুদ দোয়া বা প্রার্থনার সূরা, সূরাতুশ শোকর বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সূরা, সূরাতুত তাওহিদ বা একত্ববাদ ঘোষণার সূরা, সূরাতুস সালাত বা নামাজের সূরা, সূরাতুশ শিফা বা আরগ্যের সূরা, সূরাতুন নুর, ওয়াফিয়া, রহমত, রুকাইয়া, হুদা, নিয়ামাহ ইত্যাদি।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সিরাতুল মুস্তাকিম যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আল্লাহতায়ালা সূরা ফাতিহায় বুঝিয়েছেন। এ সূরাটি নামাজের প্রতি রাকাতে পাঠ করতে হয়, তা না হলে নামাজই হয় না। গুরুত্বের দিক দিয়ে সূরাটি অনন্য। প্রশ্ন হলো- এ সূরার শিক্ষণীয় বিষয়টি কী? গুরুত্বই বা কী? কেনইবা এ সূরাটি প্রতি রাকাতে পড়তে হয়। দৈনিক ৩২ রাকাত নামাজে ৩২ খানা দরখাস্ত পেশ করি মহান আল্লাহর দরবারে? একই বিষয়ে ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম’ বিষয়গুলো গভীরতর চিন্তার বিষয়।

সূরা ফাতিহা পাঠের গুরুত্ব
বস্তুত এটি একটি দোয়া, একটি আবেদন। দোয়ার মধ্যেই মানবমনের মূল আকুতিটি ধরা পড়ে। এখানে ধরা পড়ে তার ঈমান, প্রকাশ প্রায় তার জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। তাই প্রকৃত ঈমানদার ও মোনাফেকের দোয়া কখনও এক হয় না। আল্লাহতায়ালা এ সূরার মধ্য দিয়ে তার ঈমানদার বান্দাকে শিখিয়েছেন জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত। শিখিয়েছেন করুণা চাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। নামাজের প্রতি রাকাতে এ সূরা পাঠ বাধ্যতামূলক করে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে লাগাতার ভাবনা ও আল্লাহর কাছে সেটি চাওয়াকে মনের মধ্যে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন।

সূরা ফাতিহা: বান্দার সঙ্গে আল্লাহর কথোপকথন
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোনো বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর রাহমানির রাহিম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানাবুদু ওয়া ইয়্যাকানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম… (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। -সহিহ মুসলিম শরিফ: ৩৯৫

সূরা ফাতিহার মতো কোনো সূরা আগের উম্মতকে দেওয়া হয়নি
আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হজরত জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। -সহিহ মুসলিম শরিফ: ৮০৬

About Utsho

Check Also

খৃষ্ট ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন সাবেক বিশ্ব সুন্দরী মার্কেটা

চেক প্রজাতন্ত্রের সাবেক বিশ্ব সুন্দরী মার্কেটা কোরিনকোভা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। খৃষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *