মহাকাশে ইতিমধ্যে ডানা মেলেছে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। আসছে সাফল্য। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ এখন ব্যবহার করছে স্যাটেলাইটটি। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের ৬ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে চায় বাংলাদেশ সরকার।






ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযু’ক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা এবং বাজেট নির্ণয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের ডিজাইন এবং উৎক্ষেপণসহ কারিগরি সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযু’ক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেইন মেরিন সূক্ষ্ম।






২০২০ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকার প্রধানের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে এই প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট তৈরিতে ফ্রান্স ইতিমধ্যে কাজ করে নিজেদের কর্ম’দক্ষতা প্রমাণ করেছে। যেহেতু ফ্রান্স বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ থেকে পরিচালনার সাথে ইতিমধ্যে যু’ক্ত






তাই বাংলাদেশ সরকারের চাহিদাকে আরও ভাল ভাবে অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী স্যাটেলাইট তৈরি ও সরবরাহে প্রস্তুত। এছাড়া বাংলাদেশ স্যাটেলাইট প্রযু’ক্তিতে আরও উন্নয়ন সাধন এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে ফ্রান্স প্রশিক্ষণ এবং প্রযু’ক্তিগত সুবিধা প্রদান করতে ইচ্ছুক। অ’পরদিকে বাংলাদেশের ২য় স্যাটেলাইট তৈরি রক্ষণাবেক্ষণ এবং উৎক্ষেপণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে রাশিয়াভিত্তিক স্পেস রিসার্চ সংস্থা গ্লাভকস্মস কোম্পানি।






এই লক্ষ্যে গত বছর অক্টোবর গ্লাভকস্মস কোম্পানির ডেপুটি ডিরেক্টর ভিতালি সেভেনভ ৬ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ার দল বাংলাদেশে আসে এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের সাথে বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট স’ম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন।






এ সময় বাংলাদেশে নিযু’ক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ এর ২য় স্যাটেলাইট প্রেরণের ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, রাশিয়া ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে তাদের একটি স্লট ভাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় রাশিয়া আরও স্লট দিতে প্রস্তুত সেই সাথে বাংলাদেশের চাহিদা অনুসারে যেকোনো ধরনের স্যাটেলাইট প্রেরণ করতে সক্ষম রাশিয়া।






এ সময় রাশিয়ার স্যাটেলাইট বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ স্যাটেলাইট তৈরিতে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সহায়তা প্রদান, জনবল প্রশিক্ষণ, স্যাটেলাইট এর বহু’মুখী ব্যবহার নিশ্চিত করন এবং স্যাটেলাইট তৈরি এবং উৎক্ষেপণ খরচ নিরূপণে পরাম’র্শক হিসাবেও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।






এদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার সংসদের এক প্রশ্ন উত্তর পর্বে বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসাবে ২০২৩ সাল নাগাদ ২য় স্যাটেলাইট প্রেরণে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে থেকে ২য় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ব্যাপারে প্রস্তাব পেয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন রাশিয়ান একটি বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির সাথে বৈঠকে বিভিন্ন স্যাটেলাইটের কার্যক্ষমতা এবং তাদের ব্যবহারের উপর বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেছে। আম’রা বিষয় গুলো আরও পর্যালোচনা করে পরবর্তী স্যাটেলাইট প্রেরণ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটটি সরাসরি বাংলাদেশের উপর অবস্থান না করে কৌণিক ভাবে অবস্থান করছে তাই আম’রা চাই আমাদের পরবর্তী স্যাটেলাইটটি জেনো অবশ্যই আমাদের ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী কাছাকাছি থাকে। বাংলাদেশ চায় তার ২য় স্যাটেলাইট যেন অবশ্যই নিজস্ব কক্ষপথে থাকে যার মালিকানা বাংলাদেশ এর হাতে থাকবে।
সংসদে মন্ত্রী আরো জানান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মা’থায় রেখে প্রেরণ করা হলেও ২য় স্যাটেলাইটটি প্রেরণের ক্ষেত্রে সাম’রিক দিক, আবহাওয়া এবং কৃষি ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট টি একটি হাইব্রিড প্রযু’ক্তির স্যাটেলাইট হবে যা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটসহ অন্যান্য স্যাটেলাইটের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে সক্ষম হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এর প্রথম স্যাটেলাইট ফ্রান্সের থালাস এলেনিয়া স্পেস নির্মাণ করলেও ফ্রান্স চায় বাংলাদেশ ২য় স্যাটেলাইট ফ্রান্স ভিত্তিক বৃহৎ স্যাটেলাইট উন্নয়ন এবং উৎক্ষেপণ সংস্থা এরিয়ানস্পেস নির্মাণ করুক। এরিয়ানস্পেস ইউরোপের অন্যতম বড় স্যাটেলাইট নির্মাণ সংস্থা যারা স্যাটেলাইট নির্মাণ এর পাশাপাশি উৎক্ষেপণ করে থাকে। তারা মূলত Medium To Heavy স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণ এর জন্য পরিচিত।
বাংলাদেশ সরকার এর পরিকল্পনা অনুসারে ২০২৩ নাগাদ ২য় এবং ২০২৭ ও ২০২৯ এ ৩য় ও ৪র্থ স্যাটেলাইট প্রেরণ করা হবে।
তথ্য সূত্র: ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম