Breaking News

বদির প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ওসি প্রদীপ

কক্সবাজারসহ দেশব্যাপী আ’লোচিত-সমালোচিত এক ব্যক্তির নাম আবদুর রহমান বদি। তিনি টেকনাফের সাবেক সাংসদ। মা’দক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতার অ’ভিযোগ ওঠায় গত সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

তার বদলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান তার স্ত্রী’ শাহিন আক্তার চৌধুরী। তারপরও বদি নিয়ন্ত্রণে আসেননি বলে অ’ভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা বলছেন, বদি ও তার পরিবার এবং অনুসারীদের সঙ্গে গভীর সখ্য ছিল টেকনাফ থা’নার সদ্য সাবেক ওসি প্রদীপ কুমা’র দাশ ও তার সহযোগীদের।

বদি ও তার বলয়ের লোকজনের প্রশ্রয় পেয়েই ওসি প্রদীপ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। চাহিদামতো টাকা না পেয়ে নিরপরাধ মানুষকে ক্রসফায়ারের নামে হ’ত্যা এবং মা’দকের মিথ্যা মা’মলা দিয়ে ফাঁ’সানোসহ নানা অ’পকর্মে জড়িয়ে পড়েন বিতর্কিত এই পু’লিশ কর্মক’র্তা।

এলাকাবাসী আরও বলছেন, প্রদীপ ও তার সহযোগীদের হাতে নির্যাতিতরা টেকনাফের বর্তমান ও সাবেক সাংসদের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। এমনকি ওই সব ভুক্তভোগীকে তারা দেখাও দিতেন না।

আর ওসি প্রদীপের সখ্যের কারণে বদির স্বজন ও অনুসারীদের বি’রুদ্ধে মা’দক কারবারের অ’ভিযোগ থাকলেও তাদের ধারেকাছেও যেত না টেকনাফ থা’না পু’লিশ। এমনকি প্রদীপের বদলি ঠেকাতে কয়েক মাস আগে বদির স্ত্রী’ সাংসদ শাহিন আক্তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জে’লার পু’লিশ সুপার বরাবর ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন।

তবে সাবেক সাংসদ বদি এবং তার স্ত্রী’ বর্তমান সাংসদ শাহিন আক্তার ওসি প্রদীপকে প্রশ্রয় দেওয়ার অ’ভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, যারা স’ন্ত্রাসী ও মা’দক কারবারিদের পক্ষে কাজ করছেন, তারা এসব অ’পপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা দুজনই মা’দকের বি’রুদ্ধে ল’ড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও দাবি করেন।

টেকনাফের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী মা’দকবিরোধী বিশেষ অ’ভিযান শুরু হয়; বিশেষ করে কক্সবাজার-টেকনাফ ও উখিয়ায় জো’রেশোরে চালানো হয় এই অ’ভিযান।

তখন র‌্যা’­ব-পু’লিশের সঙ্গে কথিত ব’ন্দুকযু’দ্ধে একের পর এক মা’দক পাচারকারী নি’হত হয়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছোট কারবারিরা শা’স্তি ও হয়’রানির শিকার হলেও ইয়াবা সরবরাহ ও বিক্রির সঙ্গে জ’ড়িত বড় চক্রগুলো নির্বিঘেœ কর্মকা- চালিয়ে গেছে।

শীর্ষ মা’দক কারবারিরা ধ’রাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। মিয়ানমা’র সীমান্তবর্তী কক্সবাজার ও বান্দরবানের উখিয়া-টেকনাফ-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজে’লা দেশে ইয়াবার প্রবেশ এবং সরবরাহ নেটওয়ার্কের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত।

বেশির ভাগ সময় সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির নাম ইয়াবা কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করার অ’ভিযোগে আলোচনায় এসেছে। মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায়ও তার নাম ছিল এক নম্বরে।

এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ মানব পাচারকারীর তালিকায়ও তার নাম ছিল। বদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছাড়া ইয়াবা চো’রাচালানের অন্যতম হোতা হিসেবে হাজি সাইফুল করিম, টেকনাফ উপজে’লা চেয়ারম্যান জাফর আহম’দ, তার ছে’লে সদর ইউপি চেয়ারম্যান

শাহ’জাহান, উপজে’লা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন, তার ভাই বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, বদির ভাই কাউন্সিলর মৌলভী মুজিবুর রহমান, জালিয়াপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, শাহপরী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান ইয়াহিয়া, উখিয়ার গুয়ালিয়ার ইউপি সদস্য মোস্তাক আহম’দ,

কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার কাশেম আনসারী, একই এলাকার আবুল কালাম ও তার ভাই বশির আহম’দ, বাস টার্মিনাল এলাকার বার্মাইয়া আবু নফর, চকরিয়া পৌর যুবলীগ নেতা আজিজুল ইস’লাম সোহেল, মহেশখালী পুঁটিবিলার মৌলভী জহির উদ্দীন এবং পৌরসভা’র সিকদারপাড়ার সালাহউদ্দীনসহ অনেকের নাম এসেছে। যাদের সবাই আবদুর রহমান বদির অনুসারী। বদির সঙ্গে তাদের নিয়মিত ওঠাবসা ছিল।

এলাকাবাসীর অ’ভিযোগ, টেকনাফ থা’নার সদ্য সাবেক ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বদি, তার পরিবার ও অনুসারীদের ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। বদি টেকনাফে এলে প্রদীপ তার বাসায় নিয়মিত যেতেন। টেকনাফে বদির বাসা’সংলগ্ন একজন মুদিদোকানি গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘ওসি প্রদীপসহ থা’নার সবার সঙ্গে বদি ও তার পরিবারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকত। এমনকি বদির অনুসারীদের পর্যন্ত থা’না পু’লিশ খাতির-যতœ করত। প্রদীপ নিয়মিত বদির বাসায় আসা-যাওয়া করতেন।’

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘কয়েক মাস আগে টেকনাফ শহরে এক হাজারের মতো গাছ রোপণ করেছিলেন ওসি প্রদীপ। পরে তিনি বদির মাধ্যমে এ বাবদ পৌর মেয়রের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ওসি ও তার সিন্ডিকে’টের অ’পকর্মের শেষ নেই।’

ডেইলপাড়ার রাজ্জাক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রদীপের নেতৃত্বে পু’লিশ রাতের আঁধারে মা’দক কারবারে জ’ড়িতদের বাড়িঘর পৌরসভা’র গাড়ি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। বদির আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারীদের মধ্যে অনেকেই মা’দক কারবারে জ’ড়িত ছিল, কিন্তু তাদের বাড়িঘর ভাঙা তো দূরের কথা, পু’লিশ তাকিয়েও দেখেনি। বদির ভাই মুজিবুর রহমান ইয়াবার বড় গডফাদার। তার বাড়িঘর অক্ষত আছে এখনো।’

টেকনাফের একাধিক বাসিন্দা জানান, দেশে ২০১৮ সালে মা’দকবিরোধী অ’ভিযান শুরু হলে সাবেক সাংসদ বদির দুঃস’ম্পর্কের ভাই আবু সৈয়দ মেম্বারের ছে’লে মোহাম্ম’দ আবদুল্লাহ তার মামা মোহাম্ম’দ আমিনসহ দুবাই পালিয়ে যান। তাদের বি’রুদ্ধে মা’দক কারবারের অ’ভিযোগ ছিল। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গত রোজার আগে মোহাম্ম’দ আবদুল্লাহ দুবাই থেকে দেশে ফেরেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। দেশে ফেরার সময় তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ওসি প্রদীপ টেকনাফ থা’নার এসআই সঞ্জিত দত্তকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পাঠান। বিনিময়ে আবদুল্লাহ ওসি প্রদীপ ও এসআই সঞ্জিতকে একটি করে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উপহার হিসেবে দেন; যা নিয়ে স্থানীয় পু’লিশ সদস্যদের মধ্যে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। উপহারের কথা থা’না পু’লিশের কিছু সদস্য ফাঁ’স করে দেন। বিষয়টি জে’লা পু’লিশের কর্মক’র্তারাও জানেন।

পু’লিশ সদর দপ্তরের এক কর্মক’র্তা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ১৪১ মা’দক কারবারির একটি তালিকাসহ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ওই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বলা হয়, মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি দেশের ইয়াবা জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী। তার ইশারার বাইরে কিছুই হয় না। দেশে ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধের জন্য তার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। এমপি হওয়ার সুবাদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী বা সহযোগী নিয়ে তিনি ইচ্ছামাফিক ইয়াবা ব্যবসা’সহ অন্যান্য উৎস থেকে অ’বৈধ আয়ে জ’ড়িত আছেন। এখনো তার অনুসারী ও স্বজনরা ইয়াবা কারবার করে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তার সঙ্গে প্রদীপের ভালো স’ম্পর্ক ছিল। বদি ও তার অনুসারীদের কথার বাইরে প্রদীপ কাজ করতেন না। প্রদীপের পরাম’র্শে গত বছর বদির ভাইসহ কয়েকজন স্বজন আত্মসম’র্পণ করেছিলেন। বর্তমানে তারা কক্সবাজার কারাগারে আ’ট’ক আছেন।’

প্রদীপের ‘কি’লিং স্কোয়াডের’ তিন সদস্যকে বদলি : গতকাল শুক্রবার ওসি প্রদীপের ‘কি’লিং স্কোয়াডের’ তিন সদস্যকে টেকনাফ থা’না থেকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে কনস্টেবল সাগর দেবকে খুলনা রেঞ্জ, এসআই মিঠুন চক্রবর্তীকে কক্সবাজারের ডিএসবি ও এএসআই সঞ্জীব দত্তকে পেকুয়া থা’নায় বদলি করা হয়েছে বলে জানান পু’লিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের এক কর্মক’র্তা। প্রদীপের এই ‘কি’লিং স্কোয়াড’ নিয়ে গতকালই গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কক্সবাজার জে’লা পু’লিশের কর্মকর্তরা গতকাল বলেছেন, প্রদীপের সহযোগী পু’লিশ সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। টেকনাফ থা’নার যাদের নিয়ে বিতর্কিত কর্মকা’ণ্ডের অ’ভিযোগ ছিল, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের বি’রুদ্ধে অনুসন্ধান চালানো হবে।

ওসি প্রদীপকে প্রশ্রয় দেওয়ার স’ম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার-৪ আসনের (টেকনাফ-উখিয়া) সাংসদ শাহিন আক্তার চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওসি প্রদীপের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এলাকার আইনশৃঙ্খলার উন্নতির জন্য তার সঙ্গে কথা বলতাম। তবে তার কোনো অ’নৈতিক আবদার শুনতাম না। তাকে কোনো ধরনের প্রশয় দেওয়া হতো না। মা’দকের বি’রুদ্ধে প্রদীপ কাজ করায় তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছি তা সত্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমা’র আত্মীয়-স্বজনকেও ওসি গ্রে’প্তার করেছে। সে জন্য তো আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি। যারা অ’প’রাধ করবে তারা শা’স্তি পাবে, এটাই সত্য।’

ওসি প্রদীপের বদলি ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জে’লা পু’লিশ সুপার বরাবর ডিও লেটার পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন আক্তার বলেন, ‘ওসি প্রদীপকে ডিও লেটার হয়তো দিয়েছি। অনেককেই তো ডিও লেটার দিই। ওসি প্রদীপের সঙ্গে মোবাইলেই বেশি কথা হতো। আম’রা বেশি কাজ করি বলে আমাদের শত্রু বেশি। যারা মা’দক কারবারি বা স’ন্ত্রাসী কর্মকা-ে জ’ড়িত, তারাই আমিসহ আমা’র পরিবারের বি’রুদ্ধে অ’প্রচার চালাচ্ছে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আম’রা কোনো অ’প’রাধের সঙ্গে কখনো জ’ড়িত ছিলাম না। আমা’র স্বামীও না।’

অন্যদিকে অ’ভিযোগ স’ম্পর্কে আবদুর রহমান বদি বলেন, ‘১০ বছর সাংসদ ছিলাম। কোনো অন্যায়-অ’প’রাধের সঙ্গে কখনো জ’ড়িত ছিলাম না। মা’দক কারবার বা মা’দক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গেও আমি জ’ড়িত ছিলাম না। রাজনীতি করি বলেই একটি মহল এসব অ’পপ্রচার চালাচ্ছে। ওসি প্রদীপকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আমা’র থা’না এলাকার ওসি ছিলেন, তার সঙ্গে শুধু এতটুকুই স’ম্পর্ক ছিল। আমি রাজনীতি করি, আর রাজনীতি করি বলেই নানা সমালোচনার শিকার হচ্ছি। এখন তো আমি সংসদ সদস্য না, আপনারা অনুসন্ধান করুন যে আমি কোনো অ’প’রাধের সঙ্গে জ’ড়িত ছিলাম কি-না।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

About Utsho

Check Also

সেই মা’রিয়াকে নিয়ে খেলায় মা’তলেন ডিসি

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজে’লার হেলতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে পরিবারের সব স্বজন হা’রানো সেই মা’রিয়া সুলতানা এখনও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *