জেকেজি’র চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী আসল নাম সাবরিনা শারমিন হোসেইন। ভিকাকরুনেসা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। তার ছোট এক বোন রয়েছে।
তার ইচ্ছা ছিল সিনেমা’র নায়িকা হওয়ার। এ জন্য তিনি নাচও শিখেন। প্রথমে শি’বলী ও পরে নিপার কাছে নাচের তালিম নেন।তার জন্ম হল্যান্ডে। তার পুরো পরিবার আ’মেরিকা থাকেন।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই কলারস এফ এম ১০১.৬ নামে একটি অনলাইন রেড়িও সাবরিনা এ তথ্য জানান। সেখানে তার বিয়ে, সন্তান, চাকুরি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সিনেমায় অ’ভিনয় করার জন্য করার জন্য কয়েকজন উঠতি পরিচালকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন।
তাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডাও হতো। কিন্তু বিষয়টা তার বাবা জেনে যায়। বেড়ি পড়ে সাবরিনার পায়ে। ফলে তার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন থমকে যায়। পরে অনেকটা তার মতামত না নিয়ে বিয়ে দেয়া হয় পারিবারিকভাবে।
এইচএসসিতে বিয়ে, এমবিবিএসে সন্তান!
স্যার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়ে যায়। এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পরই তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়।
এমবিবিএস পাশ করে বিসিএস পাশ করার বছরই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়।
তার চাকুরি হয় দিনাজপুরে। ওই সময় থেকে পর’কী’য়ায় জড়িয়ে পড়ে ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন। ফলে তার স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। স্বামীকে তালাক দেয় সাবরিনা। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের এক নেতার সঙ্গে সখ্যতা করে দুই বছর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে বদলি হয়ে আসে।
২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস কোর্সে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণা করা কালীন বিভিন্ন শিক্ষক ও চিকিৎসকদের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন অ’নৈতিক সর্ম্পকে। ২০১৫ সালে এসএস ডিগ্রী পান ডা. সাবরিনা।
পর’কী’য়া থেকে আরিফের ৪ নম্বর স্ত্রী’!
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করাকালীন তার এক চিকিৎসক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় ব্যবসায়ি আরিফুর রহমান চৌধুরীর। দীর্ঘদিন দুই পর’কী’য়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। সাবরিনা আরিফকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়।
এক পর্যায়ে আরিফ তার তৃতীয় স্ত্রী’কে তালাক দেয়। ডা. সাবরিনা হন আরিফের চর্তুথ স্ত্রী’।নাম বদল করে ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইন হয়ে যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। সারিনা আরিফের চতুর্থ স্ত্রী’ । তার প্রথম স্ত্রী’ রাশিয়ায়, দ্বিতীয় স্ত্রী’ লন্ডনে। তৃতীয় স্ত্রী’ বাংলাদেশে থাকলেও সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
সাবরিনা চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে আপক্তিকর অবস্থা ধরা!
ডা.সাবরিনা বিএমএ’র এক নেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে জুনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন হিসাবে চাকুরি নিতে সক্ষম হন। পরে রেজিস্টার পদে প্রমোশন পান। সেখানকার ইউনিট প্রধা্ন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের নেতা কাম’রুল হাসান মিলনের সঙ্গে পর’কী’য়া জড়িয়ে যান সুন্দরী ডা. সাবরিনা।
বিষয়টি জেনে যান আরিফ এবং একদিন হাতে নাতে ধরে ফেলেন। দু’জনকে মা’রধর করেন আরিফ। এ ঘটনায় স্বামী আরিফের বি’রুদ্ধে শেরে বাংলা থা’নায় সাধারণ ডায়েরি করেন সাবরিনা। কাম’রুল হাসান মিলনের ক্ষমতায় ক্ষমতায়ন হয়ে দাপিয়ে বেড়াতে ড. সাবরিনা।
নিজের আসল নাম সাবরিনা শারমিনা হুসাইন বাদ দিয়ে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী লিখেন নেম প্লেইটে। এটিও তার প্রতারণা অন্যতম। অ’ভিযোগ আছে, সহকর্মী একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে তার অ’নৈতিক স’ম্পর্ক ছিল। এসব কারণেই আরিফের সঙ্গে তার স’ম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না।
প্রায়ই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো। আরিফও যৌ’নতার দিক থেকে সারবিনার চেয়ে কেন অংশে কম নয় তার অফিসের এবং বাইরের অনেক নারীদের সঙ্গে অ’নৈতিক স’ম্পর্ক ছিল ওপেন সিক্রেট। তার বি’রুদ্ধে এক নারী গুলশান থা’নায় মা’মলাও দায়ের করেছে।
শিমু পাল দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন-সাবরিনা নয়!
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা. সাবরিনা চৌধুরী নিজেকে দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি দেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন নন। বাংলাদেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জন হলেন ডা. শিমু পাল।
তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ম-২৯ ব্যাচের ছা’ত্রী । ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাশ করেন শিমু পাল। এরপর ২০০৩ সালে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারিতে এমএস কোর্সে পড়বার সুযোগ পান। ২০০৯ সালে এমএস কোর্স শেষ করে বাংলাদেশের প্রথম নারী কার্ডিয়াক সার্জনে ভুষিত হন তিনি।
ওভাল, জেকেজি ও আরিফকে তালাক!
২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আরিফুর রহমান চৌধুরীকে বিয়ে করা মধ্য দিয়ে ডা. সাবরিনা ওভাল গ্রুপ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পরে ওভাল গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেকেজি হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন।জে.কে মানে জোবেদা খাতুন। সাবরিনার মায়ের নাম। সেই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাবরিনা তার স্বামী আরিফুর রহমান চৌধুরী।
১২ জুলাই গ্রে’ফতারে পর পু’লিশের জিজ্ঞাসাবাদের আগে জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে তার যোগসাজশ নেই বলে দাবি করে সাবরিনা। তিনি বলেন, আরিফের সঙ্গে তিনি আর সংসার করছেন না। আরিফ চৌধুরী এ মুহূর্তে তার স্বামী নন।
তারা আলাদা থাকছেন। আরিফকে তিনি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন। কার্যকর হতে দুই মাস সময় লাগবে। তিনি বলেছেন, জেকেজির চেয়ারম্যান হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এটি ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন। আর ওভাল গ্রুপ একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। যার মালিক আরিফ চৌধুরী।
অ’ভিযোগের বিষয়ে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জেকেজির চেয়ারম্যান নই। আপনারা আগে কাগজ দেখান, তারপর আমা’র ব্যাখ্যা চান। তিনি বলেন, জয়েন্ট স্ট’কে আপনারা খবর নেন। আমি কোনো কোম্পানির চেয়ারম্যান নই। আমি জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং দিতাম। আমি শুধু ট্রেনিং সেন্টার পর্যন্ত যেতাম।
জেকেজির সাইনবোর্ডে তার নামের শেষে আরিফ চৌধুরীর নামের শেষাংশ যু’ক্ত আছে- এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনও তো হতে পারে এটা আমা’র আসল নাম না। ফেসবুকী’য় নাম। এটা এখনো পরিবর্তন করা হয়নি। দ্রুতই করবো। আমি কোনো অ’নৈতিক কাজ করিনি।
আজকে কেন জীবনেও করিনি। আমি এ বিষয়ে কনফিডেন্ট। সাবরিনা বলেন, আমি আরিফকে কাজ পাইয়ে দিয়েছি বা দিতাম এগুলো একেবারে মিথ্যা কথা। বরং জেকেজির জাল সনদ তৈরির কথা তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে জানিয়েছেন বলে পু’লিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান ডা.সাবরিনা।