প্র’তারণার অ’ভিযোগ গ্রে’প্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাহাত আরা খানম তূর্ণা ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিনের প্রতারণার জাল ঢাকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়েছিলো বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে এই চক্রের ১৩ জনকে গ্রে’প্তার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।






গত মঙ্গলবার (২১ জুলাই) রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে তাদের গ্রে’প্তার করা হয়। পরদিন (২২ জুলাই) ঢাকা মহানগর হাকিম মঈনুল ইস’লাম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তাদের সাত দিনের রি’মান্ড আবেদন করা হয়েছে।ত’দন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তূর্ণার নেতৃত্বে প্রতারক চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।






প্রতিদিন তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হতো প্র’তারণার আট থেকে ১০ লাখ টাকা। কিছুদিন পরপরই অ্যাকাউন্ট বাতিল করে ভিন্ন নামে নতুন অ্যাকাউন্ট করা হতো। রাজধানীর দুটি এলাকায় বাসা নিয়ে এই অ’পকর্ম করছিলো চক্রের সদস্যরা। এই চক্রে আরো অনেকে জ’ড়িত বলে ইতিমধ্যে তথ্য পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা।






স’ম্পর্কিত খবর নেত্রকোনা জে’লার সদরের দক্ষিণ নাগড়ার ৪০ নম্বর বাসার আহসান উল্লাহর মে’য়ে তুর্ণা। বাবা বিমান বাহিনীতে কাজ করার সুবাধে বেড়ে উঠেন চট্টগ্রামে। পরে তিনি অবসর গেলে সপরিবারে চলে আসেন ঢাকায়।






রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। তুর্ণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১১-২০১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্নাতক শেষ করেন ২০১৫ সালে আর ২০১৬ সালে।






স্নাতকোত্তর শেষে প্রাইভেট একটি আইটি ফার্মে জয়েন করেন তিনি। বছর খানেক পর ২০১৮ সালের শেষের দিকে তিনি ছোট্ট পরিসরে কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে প্রোডাকশন ফ্যাক্টরি চালু করেন। অল্প সময়ে ব্যবসা করে বিত্তবান (গার্মেন্টস ব্যবসার মালামাল সরবরাহ) হবেন এমন প্রলো’ভন দেখান বাংলাদেশে অবস্থানকারী নাইজেরিয়াসহ একাধিক দেশের নাগরিক।






এভাবেই পরবর্তী সময়ে বিদেশিদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) প্রতারণা শুরু করেন। আর গত দুই মাসেই শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা। পু’লিশের অ’প’রাধ ত’দন্ত বিভাগের (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য জানিয়েছেন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয়দানকারী তুর্ণা।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-২০১২ সেশনের ছা’ত্রী তূর্ণা মূলত উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ট’কশোতেও বেশকয়েকবার অংশ নিয়েছেন। সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বেশ পরিচিত ছিল তুর্ণা। সখ্যতা ছিল সব মহলে। ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ এবং অনেক সাংসদও ছিল তার এই সখ্যতার তালিকায়।
তার নিজের গড়া প্রোডাকশন ফ্যাক্টরি রয়েছে বলেই জানে সবাই। সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু এসব পরিচয়ের আড়ালে ভ’য়ঙ্কর প্রতারক এই নারী। গত দেড় বছর ধরে বিদেশি চক্রের সঙ্গে মিশে নির্বিঘ্নে প্রতারণা করে যাচ্ছে। অন্যান্য অফিসের মতোই প্রতারণার অফিস খুলে বসেছিলো এই চক্র। মিরপুর-১১ এর সি ব্লকের পাঁচ নম্বর এভিনিউর ৭/৮ নম্বর বাসা ও মিরপুর-১০ এর তিন নম্বর রোডের বেনারসি পল্লীর ৩৯/ডি২, বাসায় প্রতারণার অফিস খুলেছিলো এই চক্র।
বেনারসি পল্লীর ছয়তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল তাদের অফিস। চতুর্থ তলায় থাকতো নাইজেরিয়ানরা আর ষষ্ঠ তলায় থাকতেন রাহাত আরা খানম তূর্ণা। তূর্ণার বাসায় অবাধে আসা-যাওয়া ছিল তাদের। ওই অফিসে একেকজন আলাদা আলাদা ডেস্কে ল্যাপটপ নিয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে শুধু ফেসবুকে চ্যাটিং করতো।
তিনটি শিফটে ডিউটি করতো চক্রের সদস্যরা। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত থাকতো ল্যাপটপে, ফোনে। প্রতারণার কাজে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতো তারা। বিভিন্ন নামে ফেসবুকে আইডি রয়েছে এই চক্রের সদস্যদের। বিশেষ করে আ’মেরিকান আর্মিদের ইউনিফরম পরিহিত ছবি দিয়ে এসব আইডি খুলে চক্রের সদস্যরা। দিন রাত বাসায় বসে চ্যাট করে বন্ধুতা করে দেশে-বিদেশে।
সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে তূর্ণা জানিয়েছেন, এক একটি হিসাব নম্বরে সাত-আট জনের টাকা নেয়া হতো। তারপরই হিসাব নম্বর বন্ধ করে দেয়া হতো। বিভিন্ন জনের নামে এসব হিসাব খোলা হতো। টাকা জমা হলে সুবিধাজনক শাখা থেকে তা উত্তোলন করা হতো।
পল্লবী থা’নায় দায়েরকৃত মা’মলার ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিউটন কুমা’র দত্ত জানান, এটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। এতে জ’ড়িত অন্যদেরও গ্রে’প্তারের চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, পড়ালেখা শেষে চাকরি খুঁজছিলো রাহাত আরা খানম তূর্ণা। তা প্রায় দেড় বছর আগের কথা। নিউমা’র্কেট এলাকায় পরিচয় হয় ডেনিস নামে এক নাইজেরিয়ানের সঙ্গে। কথা বলার একপর্যায়ে ডেনিস তাকে চাকরির প্রস্তাব দেয়। মা’র্চেন্ডাইজিংয়ের নামে অফিস খুলেছিলো নাইজেরিয়ান প্রতারকরা।
অল্পদিনেই নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে তোলে তূর্ণা। তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে সহ’জেই তার ঘনিষ্ঠতা হয়। রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় এই তরুণী। তাদের প্রতারণা ব্যবসার পুঁজি সাতটি ল্যাপটপ, ২১টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন এবং অসংখ্য সিম। ভা’রতের রাজস্থান, কলকাতা, কুয়েত, আ’মেরিকা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা এই চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চক্রের সদস্যরা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত দেড় বছর ধরে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। গত দুই মাসেই শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৬ কোটি টাকা।
ভুক্তভোগীদের অ’ভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডির অ’তিরিক্ত পু’লিশ সুপার জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে গত ২১ জুলাই ওই বাসা থেকেই প্রতারকদের গ্রে’প্তার করেছে সিআইডি।