বাটপারি কাকে বলে উদাহ’রণসহ বুঝতে হলে ডিজে শাকিলের কাছে আসতে হবে। সকল ধরনের নিয়োগপত্র, স্ট্যাম্প, চেক নিজের কম্পিউটারে তৈরি করত এই শাকিল। এ যেন আ’লোচিত সেই আরেক ‘সাহেদ করিম’।
প্রতারক সাহেদ করিম রিজেন্ট হাসপাতা’লের চেয়ারম্যান আর ডিজে শাকিল হলো রিশান ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক লোন সার্ভিস নামের ভু’য়া দু’টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। সেই প্রতারক শাকিল অবশেষে গ্রে’ফতার হয়েছে বগুড়া গোয়েন্দা পু’লিশের অ’ভিযানে।
বুধবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ জে’লার তাড়াশ উপজে’লা থেকে প্রতারণার দায়ে শাকিলসহ ৩ প্রতারককে গ্রে’ফতার হয়। তাদের বি’রুদ্ধে বগুড়া সদর থা’নায় প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মা’মলা হয়েছে।
গ্রে’ফতারকৃতরা ফেসবুকে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক লোন সার্ভিস নামে পেজ খুলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। গ্রে’ফতারকালে প্রতারকদের অফিস থেকে উ’দ্ধার করা হয় ১২’শ এক কোটি বাহাত্তর লক্ষ
১০ হাজার টাকার ভু’য়া চেক, সাম’রিক বাহিনীর ভু’য়া নিয়োগপত্র, বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভু’য়া পরিচয়পত্র ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদী। বৃহস্পতিবার তাকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ’দালতে প্রেরণ করে ৬ দিনের রি’মান্ড আবেদন করেছে মা’মলার ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা।
বগুড়ার গোয়েন্দা পু’লিশের ওসি আছলাম আলী পিপিএম জানান, ইন্টারন্যাশনাল লোন সার্ভিসের নামে ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দেখে বগুড়ার আমায়রা এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী আমানত উল্লাহ তারেক ও অ’ভি এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী আশিক তাদের সাথে যোগাযোগ করেন।
কমিশনের মাধ্যমে তাদেরকে পাঁচ কোটি টাকা লোন পাইয়ে দেবার নাম করে কয়েক দফায় ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নেয় ডিজে শাকিল। এরপর তাদেরকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে লোন অনুমোদনের চিঠি এবং সাড়ে চার কোটির দুটি চেকের স্ক্যান কপি মেইলে দেয়া হয়।
কিন্তু দীর্ঘ দিনেও চেকের মূল কপি না দেয়ায় তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন লোন অনুমোদনের চিঠি এবং চেকগুলো ভু’য়া। পরে অ’ভিযোগ পেয়ে বগুড়া জে’লা পু’লিশ সদস্যরা তাড়াশে অ’ভিযান পরিচালনা করে।
অ’ভিযান চালিয়ে শাকিলসহ ৩ জনকে গ্রে’ফতার করে পু’লিশ। এদের মধ্যে রাব্বী শাকিল ওরফে ডিজে শাকিল (৩২) তাড়াশ উপজে’লা যুবলীগের সহ-সভাপতি এবং উপজে’লার বারুহাস পশ্চিমপাড়া গ্রামের গো’লাম মোস্তফার পুত্র।
গ্রে’ফতারকৃত অ’পরজনরা হলেন তার সহযোগী আইটি স্পেশালিস্ট কুস্মবী গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র হু’মায়ুন কবির মিলন (২৮) ও ম্যানেজার নওগাঁ জে’লার মান্দা উপজে’লার গাড়ীক্ষেত্র গ্রামের সাইদুর রহমানের পুত্র হারুনার রশিদ ওরফে সাইফুল ইস’লাম (২৬)।
এসময় ভু’য়া চেক ছাড়াও সাম’রিক বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভু’য়া নিয়োগপত্র ও চুক্তিনামা, ৬০টি সিম কার্ড, তিনটি কম্পিউটার ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ভু’য়া পরিচয়পত্র উ’দ্ধার করে পু’লিশ।
বগুড়া পু’লিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) জানান, যেকোন অ’প’রাধ দমনে জে’লা পু’লিশ সদা তৎপর রয়েছে। বগুড়ার এক ব্যবসায়ীর মা’মলায় পু’লিশ অ’ভিযান চালিয়ে প্রতারকদের গ্রে’ফতার করেছে। এদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বারুহাস গ্রামের স্থানীয়রা জানান,
বছর দশেক আগে শাকিল ঢাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশেষ করে ডিজে পার্টি করতো- এদের সাথে ঘোরাফেরা ছিলো তার। ডিজে পার্টিতে সহযোগী হিসেবে থাকতে থাকতে শাকিল থেকে ডিজে শাকিল হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর তাড়াশ সদরে বিয়ের পর বদলে যেতে থাকে তার অবস্থান।
জানা গেছে, পূর্বে কখনো দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও হঠাৎ করেই উপজে’লা যুবলীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। আর এই পদ ব্যবহার করে নেতাদের সাথে আ’লোচিত প্রতারক সাহেদ করিমের মত ঘনিষ্ঠ হতে থাকে।
বিভিন্ন জনের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তার কিছু অংশ শাকিল দুই একজন নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে সব ম্যানেজ করতো বলে এলাকায় আলোচনা রয়েছে। তার পোস্টারে ব্যবহার করা বিভিন্ন পদ-পদবির অধিকাংশই ভু’য়া।
এদিকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও গত ৮ বছরে তার চলাফেরা বদলে যেতে থাকে। বুধবার সে গ্রে’ফতার হওয়ার পর তার গ্রামের মানুষ হতবাক হয়ে গেছে। শাকিলের প্রতারণার খবরসহ অ’পকর্ম শুনে গ্রামবাসী অ’বাক।
সূত্রঃ বিডি-প্রতিদিন