Breaking News

ক’রোনা-এর সাথে সম্পর্কিত একটি নতুন রো’গ

সাম্প্রতিক সময়ে সার্স-কোভ-২ ভা’ইরাসটি দ্বারা পুরো পৃথিবী বৈশ্বিক মহামারীতে আ’ক্রান্ত। সব বয়সের মানুষই আ’ক্রান্ত হচ্ছে এই রো’গে; বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাঝে এর সং’ক্রমণ ও মৃ’ত্যুঝুঁ’কি বেশি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিলো, শিশুদের এতে আ’ক্রান্ত হওয়ার ঝুঁ’কি অনেক কম; বাংলাদেশের মোট আ’ক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১.৮% ছিলো ২০ বছরের নিচে ও ১০ বছরের নিচে ছিলো ৪.২%।

তবুও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পুরো ইউরোপ থেকে ক্লিনিক্যাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, কো’ভিড-১৯ সদৃশ নতুন আরেকটি ক্লিনিক্যাল সিনড্রোম রয়েছে যাতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁ’কি বেশি। এই নতুন ও বিরল রো’গটির নাম মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম (এমআইএস-সি) অথবা পেডিয়াট্রিক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম (পিএমআইএস)।

এই রো’গে শরীরের একাধিক অঙ্গে র’ক্তনালীর প্রদাহ সৃষ্টি হয়, এবং তা হয় অসম্ভব দ্রæত গতিতে। এতে র’ক্তের প্রবাহ কমে গিয়ে হার্ট, কিডনি, ফুসফুস ও য’কৃতের মতো একাধিক অ’ঙ্গকে ক্ষ’তিগ্রস্থ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলো অনেকটা কাওয়াসাকি ডিজিজ ও টক্সিক শক সিনড্রোম-এর মতো।

এ রোগ প্রথম ধরা পড়ে যুক্তরাজ্যে, ২৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে এবং পরে একে একে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতেও এটি দেখা যায়। বাংলাদেশে এটি প্রথম সনাক্ত করা হয় ১৫ মে ২০২০ তারিখে, এবং পরে ২৭ মে ২০২০ তারিখে এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকাতে।

ডাঃ এম কামরুল হাসান, শিশুরোগ বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ডাঃ তাহেরা নাজরিন, শিশু হৃদরোগ বিষয়ক কনসালটেন্ট, শিশু বিভাগের ডাক্তারগণ ও শিশু ইনটেনসিভ কেয়ার টিমের সহযোগিতায় রো’গটি নির্ণয় করেন ও সফলভাবে এর চি’কিৎসা করেন।

রো’গী দুজন ছিলো সাড়ে ৩ মাস বয়সী একটি মেয়ে ও ২ বছর ২ মাস বয়সী একটি ছেলে। দুজন শিশুরই যথাক্রমে ৫ ও ৭ দিন ধরে ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফাররেনহাইটে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ছিলো, তার সাথে ছিলো ডায়রিয়া, চোখ ও ঠোঁট লাল হয়ে যাওয়া এবং পায়ের হালকা ফোলা ভাব।

এর সাথে তাদের হৃদপিন্ডে র’ক্ত সরবরাহকারী করোনারি র’ক্তনালীও আক্রান্ত হয়ে ফুলে গিয়েছিলো। বয়সে বড় শিশুটির খিঁচুনিও হয়েছিলো এবং সেই সাথে ছিলো হার্ট বড় হয়ে যাওয়া ও হার্টের কা’র্যক্ষমতা হ্রা’স। আরটি-পিসিআর টেস্টে এই শিশুটির কো’ভিড-১৯ পজিটিভও দেখায়।

অন্য রোগীটির রেজাল্ট যদিও নেগেটিভ আসে, কিন্তু কিছুদিন পরই তার পরিবারের সকল সদস্যদের করোনা স’নাক্ত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্যা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)-এর পরামর্শমতে, কোভিড-১৯ ও এমআইএস-সি একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। পজিটিভ অ্যান্টিবডিগু পরীক্ষা করে এটি প্রমাণিত যে,

এমআইএস-সি-তে আ’ক্রান্ত অসংখ্য শিশু অতীতে কোভিড-১৯ দ্বারা আ’ক্রান্ত হয়েছিলো; এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণও ছিলো না। তবুও, শিশুদের মধ্যে এই ভা’ইরাসটি সক্রিয় থাকতে পারে এবং একই সাথে তার মধ্যে এমআইএস-সি এর ল’ক্ষণগুলোও দেখা যেতে পারে।

ছেলে শিশুটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-তে চি’কিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো। দুজন শিশুকেই গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিলো এবং তাদেরকে ইন্ট্রাভেনাস ইমুনোগেøাবুলিন (আইভিআইজি) দেয়া হয়েছিলো। ইমুনোগ্লোবুলিন (আইভিআইজি) হচ্ছে অ্যান্টিবডির মিশ্রণ, যা সুস্থ ডোনারের রক্তের প্লাজমা থেকে তৈরি করা হয়; এটি সং’ক্রমণ ও প্রদাহের বি’রুদ্ধে ল’ড়াই করতে সাহায্য করে।

এই চিকিৎসায় তাদের অবস্থা স্থিতিশীল ও ক্রমে উন্নতি হলে পরে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয় এবং নিয়মিত ফলোআপ-এ রাখা হয়। এই ম’হামারী চলাকালীন সময়ে, অভিভাবকদের উচিৎ তাদের সন্তানদের এই ক্ষতিকর ভা’ইরাসের সং’ক্রমণ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি এই নতুন ও বিরল রো’গের ব্যাপারেও সতর্র্ক থাকা। রোগটি কীভাবে বেড়ে উঠে, ক্ষ’তিকর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে এই রোগের সংক্রমণ থেকে আমাদের সন্তানরা বাঁচতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।

এমআইএস-সি-এর লক্ষণসমূহ কী কী?
এই রোগের ফলে: * প্রচন্ড জ্বর থাকবে, যা ৩-৫ দিনের বেশি স্থায়ী হতে পারে * পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমি-ভাব হবে * চোখ লাল হয়ে যাওয়া * ঠোঁট, জিহবার লাল হয়ে যাওয়া * চামড়ায় ফুসকুড়ি * ত্বকের রং পরিবর্তন, ত্ব’কের নিচে র’ক্ত জমার ল’ক্ষণ * বুকে ব্যথা অনুভূত হবে * শ্বাস’কষ্ট* ক্লা’ন্ত লাগবে * এবং শিশুদের ক্ষেত্রে খাওয়াদাওয়ার প্রতি অনী’হা

এমআইএস-সি-তে কারা আক্রান্ত হয়?
শিশুদের মধ্যে এই রোগটি বেশি দেখা গেলেও অল্প বয়স্ক তরুণরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই হিসাবে, ২১ বছরের কম বয়সী শিশু ও কিশোররা এতে আ’ক্রান্ত হতে পারে। কোভিড-১৯-এর সাথে সম্পর্কিত থাকার সম্ভাবনার জন্য কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদের এতে আ’ক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে। তবে, এমআইএস-সি রোগীদের দেহে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির উপস্থিতি বা কোভিড-১৯ ডায়াগনোসিস করার জন্য কোনো উ’পসর্গ থাকবেই তা জরুরি নয়।

এমআইএস-সি এর কি চিকিৎসা সম্ভব?
হ্যাঁ, এর চিকিৎসা সম্ভব এবং উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি শিশু বা কিশোরদের মধ্যে দেখা দিলে অবিলম্বে চি’কিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই চিকিৎসা বাড়িতে করা সম্ভব নয়, কারণ এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হয়; এমনকি আইসিইউ-এরও প্রয়োজন হতে পারে।

তাই, অভিভাবকদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে এবং তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে এমন লক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে। এমআইএস-সি সং’ক্রমণ হওয়া থেকে বাচ্চাদের কীভাবে দূরে রাখবেন? কোভিড-১৯-এর সাথে সম্পর্কিত তাই, শিশুদের এমআইসিএস-সি হওয়া থেকে বাঁচা’নোর সর্বোত্তম উপায় হলো তাদের সার্স-কো’ভ-২ ভাই’রাসের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা।

এটি নিশ্চিত করতে অভিভাবকগণ যা করতে পারেন: * সন্দেহযুক্ত বা নিশ্চিত কোভিড-১৯-এ আ’ক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা * মুখে মাস্ক পরা (২ বৎসর বয়সের বেশি) * সবার সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা * কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

কোনো শিশুর মধ্যে যদি এমআইএস-সি-এর লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তার চি’কিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং কোনো হা’সপাতালে স্থানান্তর করাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে রো’গীর অবস্থার দ্রæত অবনতি ঘটতে পারে; এমনকি মৃ’ত্যু’র কারণও হতে পারে।

এই রো’গ সম্পর্কে জ্ঞান এখনও সীমিত কিন্তু বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা প্রতিয়িত নমুনা সংগ্রহ করতে ও এটিকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যা রোগটি প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসার উপায়কে উন্নত করতে সহায়তা করবে, যেনো আ’ক্রান্ত রো’গীরা আরও ভালো ফলাফল পান।

এভারকেয়ার হলো একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্লাটফর্ম, যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, কেনিয়া ও নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে অপারেট করছে। ক্লিনিক ও হসপিটালগুলোয় রো’গীদের জন্য স্বাস্থ্যসুবিধা নেয়া আরও সহজতর করে এবং স্বাস্থ্যসেবাকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এনে এভারকেয়ার মানুষের জীবনকে আরও সাবলীল করে চলেছে।

এর মাধ্যমে রোগীদের সার্বিক সেইফটি এবং ক্লিনিক্যাল সফলতার মাত্রা বাড়ানোর লক্ষ্যে এভারকেয়ার অবিরাম মান-উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন সেবার একটি মজবুত ভিত তৈরি করে চলেছে। এভারকেয়ার-এর পোর্টফোলিওতে রয়েছে বিশ্বজুড়ে ২৮টি হস’পিটাল, ১৮টি ক্লিনিক, ৫৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দুটি নির্মাণাধীন হসপিটাল।

এভারকেয়ার সম্পূর্ণরূপে এভারকেয়ার হেলথ ফান্ডের মালিকানার অধীনে, যা দ্য রাইজ ফান্ড-এর (গেøাবাল অ্যাসেট ম্যানেজার ‘টিপিজি’-এর একটি প্রভাববিস্তারী বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম) ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্রæত সম্প্রসারণশীল মার্কেটের জন্য একটি হেলথ ফান্ড। এভারকেয়ার হেলথ ফান্ড বিশ্বজুড়ে নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রভাববিস্তারী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান-এর অন্তর্ভুক্ত।

About Utsho

Check Also

যে ৫ কারণে বাংলাদেশে দ্রুত কমে যেতে পারে করো’না

বাংলাদেশে আশাবা’দী মানুষের সংখ্যা কম নয় এবং সংশয়বা’দীদের বি’রুদ্ধে আশাবা’দীরা সবসময় আশার আলো ছড়িয়ে থাকেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *