করো’নাভাই’রাস মহা’মারি প্রতিরোধ করতে অন্যান্য দেশের মতো মিসরেও লকডাউন বাস্তবায়ন করা হয়। আর এই অবসরকে কাজে লাগিয়ে কোরআনে কারিম মুখস্ত করে হাফেজ হলেন- মিসরীয় গৃহিণী নাসমা ফুলি।
কোরআনের হাফেজ হয়ে লকডাউনের অবসরকে অর্থবহ করে তোলার অনন্য নজির গড়ে তিনি আলোচনায় এসেছেন। নাসমা ফুলি বলেন, ‘আমি আরও দেড় বছর আগে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার ইচ্ছা করি।
সে অনুযায়ী ঘরের কাজের পাশাপাশি সপ্তাহের পাঁচ দিন কোরআনে কারিম থেকে পাঁচ পৃষ্ঠা মুখস্থ করতে থাকি। আর বৃহস্পতি ও শুক্রবার অন্যান্য কাজ গোছানোর জন্য রাখতাম।
এর মধ্যে লকডাউন আমার সামনে অবারিত সুযোগ এনে দেয়। হঠাৎ পাওয়া অবসরকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।’ লকডাউনের আগে নাসমা ফুলি ১৯ পারা হিফজ সম্পন্ন করেন। বাকি ১১ পারা লকডাউন শুরু হওয়ার পর শেষ করেন।
তিনি বলেন, ‘যখন করোনাভাইরাস আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়, তখন আমার মেয়ে এই অবসরে বাকি থাকা ১১ পারা মুখস্থ করার তাগাদা দিতে থাকে। তার কথামতো ৬ মে থেকে শুরু করে ১৬ জুন পর্যন্ত অবশিষ্ট ১১ পারার হিফজ সম্পন্ন করি। নতুন অংশ মুখস্থ করার পাশাপাশি পেছনের মুখস্থ করা পারাগুলোও নিয়মিত তেলাওয়াত করতাম।’
মাঝবয়সে উপনীত হয়েও কোরআনে কারিম মুখস্থ করে নাসমা ফুলি বেশ আনন্দিত। উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন এভাবে, ‘করোনার অবসরে হিফজ সম্পন্ন করে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করছি আমি।’
ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা চিকিৎসক হিজাবি ফারজানা
ফারজানা হোসেইন। হিজাব পরেন, মেনে চলেন ইসলামের নিয়ম-কানুন। তিনিই এবার হয়েছেন যুক্তরাজ্যের বর্ষসেরা চিকিৎসক। করোনাভাইরাসে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাজ্য।
দেশটিতে করোনার এই মহামারির সময়ে সামনের সারিতে থেকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে বর্ষসেরা চিকিৎসক নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চিকিৎসক ফারজানা হোসেইন।
দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচএস এই ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পিকাডিলি সার্কাসের সামনের তাকে নিয়ে বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে। ব্রিটেনের সাটারস্টক ডটকম তার ছবি প্রকাশ করেছে। ডা. ফারজানা হোসেইন ১৮ বছর ধরে পূর্ব লন্ডনে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত।
দুই কন্যা সন্তানের জননী ডা. ফারজানা হোসেইন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইমারি কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ডা. ফারজানা হোসেইন।
ফারজানা হোসেইনের বাবা ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তিনি মূলত অ্যানেস্থেসিস্ট হিসেবে বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখা করতে সেখানে যান। পরের বছর যখন যুদ্ধ শুরু হল তখন তার বাবার বৃত্তি বাতিল হয়ে যায়।
ওই সময় দেশেও ফিরতে পারেননি তিনি। স্ত্রী ও এক বছরের ছেলে সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তিনি। এমন সময় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে তিনি বিনাবেতনে দীর্ঘদিন কাজ করেন।
ফারজানার যখন ১৯ বছর বয়স, তখন তার মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই সময় ফারজানা মেডিকেল প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ওই সময় তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে মায়ের শেষ উপদেশ ছিলো- ‘আমি চাই তুমি চিকিৎসক হও এবং অসহায়দের সেবা করো।’
মায়ের এই কথাকে সম্বল করে পড়াশোনা চালিয়ে যান ফারজানা এবং নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলেন। এখন ফারজানা অনেকের আদর্শ।