নামাজ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ইবাদত। এটা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের দ্বিতীয়। মুসলমানরা শারীরিক সুস্থতার চেয়ে আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের গুরুত্ব নিয়ে এই ইবাদত পালন করেন। তবে এটা সত্য যে, নিয়মিত নামাজ আদায়ের ফলে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকার অর্জিত হয়। এই করো’না মহা’মারিতে যেসব বিষয় যেকোনো মানুষকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। করো’নাকালে সুস্থ থাকা সবার অন্যতম চাওয়া। বিশেষত নামাজের মাঝে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার উভয় উপকার আছে।






এবার জেনে নেওয়া যাক, নামাজ কীভাবে মানসিক ও দৈহিকভাবে কোনো ব্যক্তিকে সুস্থ রাখতে পারে।
করো’নাভাই’রাস থেকে বেঁচে থাকতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরামর্শটি বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন তাহলো- বারবার সাবান পানিতে হাত ধোয়া। করো’নাভাই’রাসটি বিভিন্ন সারফেসে লেগে থাকে আর হাতের সংস্পর্শে ভাইরাস মুখ বা চোখ দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকে। তাই বারবার হাত ধোয়ার কারণে ভাইরাস মরে যায়, তা আর মানব শরীরে প্রবেশ করতে পারে না।






দেখুন, ইসলোমের বিধানমতে নামাজ আদায় করার পূর্বে অবশ্যই নামাজ আদায়কারীকে অজু করতে হয়। অজুর চারটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে- উভয় হাতের কনুই, পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা এবং কুলি ও মাথা মাসেহ করা। এ চারটি কাজের মাধ্যমে ধর্মীয় বিধি যেমন প্রতিপালন হয় তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষাও নিশ্চিত হয়।
কুলির ফলে মুখগহ্বর পরিষ্কার হয়, ফলে মুখের বিভিন্ন ভাই’রাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে মুখগহ্বর নিরাপদ থাকে। মুখ ধোয়ার ফলে মুখের মধ্যে লেগে থাকা ধুলোবালিসহ ভাই’রাস, ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে পরিষ্কার হয়।






ফলে চোখ, নাকসহ করো’নার প্রবেশ মুখসমূহ নিরাপদ থাকে। উভয় হাতের কনুইসহ ধোয়ার মাধ্যমে হাতে লেগে থাকা জীবাণু ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। যা হাতকে নিরাপদ করে দেয়, ফলে এই হাতের স্পর্শ নাক-মুখ-চোখ যেখানেই যাক আর বিপদের কারণ হয় না। উভয় পায়ের টাখনুসহ ধোয়ার মাধ্যমে পায়ে লেগে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু ধুয়ে পরিষ্কার হয়। যাতে করে পা আর কোনো ধরণের ভাই’রাসের বাহক হয়ে ঘরে প্রবেশ করে না। তবে এসব বিষয় তখনই কাজ করবে যখন অজুর পানি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। এ ক্ষেত্রে ইসলামি নির্দেশনাও স্বাস্থ্যবিধির পক্ষেই। অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর পানিতে অজু যেমন হবে না তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষাও মিলবে না।






নামাজ আদায়ের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতি আছে। নামাজ যেমন দৈহিক ইবাদত তেমনি মানসিকও। নামাজ আদায়ে নির্দিষ্ট কিছু দৈহিক কসরতও আছে যা আদায়কারীকে প্রভুর নির্দেশনা পালনের পাশাপাশি আ্যরোবিক জেন্টাল এক্সারসাইজেরও সুবিধা দেয়। নামাজে নির্দিষ্ট সময় ধরে শরীরকে ব্যবহার করে রুকু-সিজদা করতে হয়। যার মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর করো’নাকালে অক্সিজেনেরই প্রয়োজনীয়তা কত যে বেশি তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্দিষ্ট মুভমেন্টের ফলে যে ব্যায়াম হয়। যেসবের মাধ্যমে শরীরের হাড়ে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে হাড় শক্ত হয়। গিরায় ব্যাথা কমে।






সুগার কন্ট্রোল সহজ হয়, প্রদাহরোধে সাহায্য করে। মানসিক বিষন্নতা কমে। যার মাধ্যমে শরীর রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের খুবই প্রয়োজন। আর এসব শারীরিক ব্যায়াম বর্তমান করো’না মহা’মারিতে অত্যাধিক প্রয়োজন। এ করো’নাতে সুস্থতাই যেখানে পরম আরাধ্য হয়ে দেখা দিয়েছে সেখানে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি যেমন অর্জন করা যাবে তেমনি সুস্থও থাকা যাবে।
তাই আসুন, নিয়মিত নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলি।