চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গ্রাম্য মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে ১৮ বছর ধরে তালাক না দিয়েও স্ত্রী’ থেকে আলাদা থাকতে হচ্ছে দোলেয়ার হোসেন সেন্টুকে (৪০)।
মাতব্বরদের সিদ্ধন্ত অনুযায়ী একই বাড়িতে স্ত্রী’ সোফিয়া বেগমের সঙ্গে বসবাস করলেও তার সঙ্গে কোনো শারীরিক স’ম্পর্ক করতে পারবেন না দেলোয়ার। তিনি জানান, স্ত্রী’কে ঘরে রেখে ১৮ বছর বারান্দায় রাত কা’টাতে হচ্ছে তাকে।
এমনকি ২০ বছর বয়সী ছে’লে শাহিনের (২০) সঙ্গেও তার কোনো স’ম্পর্ক নেই। ১৮ বছর ধরে মাতব্বরদের রায় ভাঙতে না পেরে এখন পাগল প্রায় দেলোয়ার। দেলোয়ারের দাবি মাতাব্বরদের রায়ের কারণে তার জীবনে এমন দশা।
দোলেয়ার হোসেন সেন্টু জানান, ছোট’কালে বাবা মোকবুল হোসেনের মৃ’ত্যুর পর থেকে অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে জীবন কাটতো তার। কোনো রকমে গ্রামের সামান্য খাস জমিতে মাটির ঘরে বাস করে আসছিলেন তিনি।
২০০০ সালের এক রাতে একই গ্রামের বিত্তশালী ইলিয়াস মেম্বারের মে’য়ে সোফিয়া বেগম ভালবাসার টানে বাবার ধনসম্পদ ত্যাগ করে দেলোয়ারের ঘরে স্ত্রী’র ম’র্যাদার দাবিতে চলে আসেন। সোফিয়াকে তার বাবার বাড়িতে ফেরাতে না পেরে পরদিন নওগাঁর কোর্টে গিয়ে তারা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন।
এ ঘটনায় ইলিয়াস মেম্বার তার মে’য়েকে অ’পহ’রণের অ’ভিযোগে কোর্টে মা’মলা করেন ও কয়েক দফায় দেলোয়ারকে মা’রপিট করেন। কিন্তু তাতেও সোফিয়া বাবার বাড়িতে যেতে রাজি হয়নি। সুখের সংসারে বছর ঘুরে আসে সন্তান শাহিন।
এরই মধ্যে সোফিয়ার বাবার ইন্ধনে গ্রাম্য মাতব্বররা সুযোগ খুঁজতে থাকেন। একদিন স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে সামান্য কথা কা’টাকাটি নিয়ে বসে গ্রাম্য সালিশ। ওই গ্রামের মৃ’ত আহাম্ম’দ আলীর ছে’লে আলহাজ হারেজ উদ্দীন, নওশাদ, মৃ’ত ওহেদ মন্ডলের ছে’লে আব্দুস সাত্তার,
মৃ’ত সাইফুদ্দিন মন্ডলের ছে’লে বর্তমান নাচোল ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম, তৎকালীন ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমানসহ সোফিয়ার বাবার পক্ষের লোকজনের যোগসাজশে সোফিয়ার ভরণপোষণ না দেয়া ও স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে ঝগড়ার কারণে মাতব্বররা সিদ্ধান্ত দেন, ‘স্ত্রী’ সোফিয়া দেলোয়ারের ঘরেই থাকবে।
কিন্তু দেলোয়ার কোনোদিন স্বামীর অধিকার পাবে না। এ রায় না মানলে দেলোয়ারকে কঠোর শা’স্তি দেয়া হবে।’ এ ব্যাপারে দেলোয়ারের স্ত্রী’ সোফিয়া বেগম জানান, তাদের স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে তালাক বা ছাড়াছাড়ি হয়নি। ভরণপোষণ না চালানোর জন্য সালিশদাররা আমাদের আলাদা করে রেখেছেন।
সলিশদার হারেজ উদ্দিন জানান, স্বামী-স্ত্রী’র তালাক হয়নি। স্ত্রী’কে মা’রপিট ও ভরণ-পোষণ চালাতে না পারার কারণে ওই রায় দেয়া হয়েছিল। ভেবেছিলাম পরে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে মিল-মহব্বত হবে।
সাবেক মেম্বার হাফিজুর রহমান ও বর্তমান নাচোল ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জানান, ম’রহু’ম বেলাল চেয়ারম্যান তাদের স্বামী-স্ত্রী’র বিরোধটি নিষ্পোত্তি করার ভা’র দিয়েছিলেন আমাদের উপর। বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি।
তবে ভুক্তভোগী আমা’র নিকট বিচারপ্রার্থী হলে সুবিচার করার চেষ্টা করব।অন্যদিকে দেলোয়ারের দাবি তার শ্বশুর ও গ্রামের সালিশদারেরা তার প্রতি অবিচার করেছেন। এমন বিচারকদের বিচার হওয়া দরকার।