দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকাংশ বেকার থাকছেন। অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। দেশীয় গবেষণা সংস্থাগুলোর জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। কিন্তু কাজ পান মাত্র সাত থেকে আট লাখ। প্রায় ৫০ শতাংশ স্নাতকই বেকার। শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার মান সঙ্কট এই বেকার সমস্যাকে প্রকট করছে।
এমন বাস্তবতায় চাকরি পাওয়া বলতে গেলে এক রকমের সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে শিক্ষিত তরুণদের বিরাট একটি অংশ হতাশার মধ্যে দিন গুজরান করছেন।
তবে অনেক তরুণ রয়েছেন, যারা চাকরির পিছনে না দৌড়ে লোক লজ্জা ছুঁড়ে ফেলে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার লক্ষ্যে ছুটতে থাকেন। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট বা বড় পরিসরে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করেন। ঠিক এমনই একজন তরুণ তারিক লিটু। তিনি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগ ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লিটু খুলনা জেলার অন্তর্গত কয়রা থানার গোবরা গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে।
চলতি বছরে এমবিএ শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষির দিকেই হেঁটেছেন তিনি। অল্প পুঁজিতে হাঁসের খামার করে মাসে আয় করছেন প্রায় ২৪ হাজার টাকা। শিক্ষা জীবনেই নিজের খরচ নিজে চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে ২০১৮ সাল থেকে বাড়িতে হাঁসের খামার শুরু করেন। বর্ণা কবলিত এলাকায় বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিকুলতা থাকা সত্ত্বেও কখনো দমে যাননি লিটু।
শুরুতে তিনি ইউটিউবে হাঁস পালনের ভিডিও দেখে অভিজ্ঞতা নেন। এরপর খামার শুরুর আগে স্থানীয় যুব উন্নয়ন থেকে হাঁস ও মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। পরে যুব উন্নয়ন থেকে ৪০ হাজার ও মা-বাবার থেকে ১০ হাজার টাকা পুঁজিতে ৩০০ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন খামার। গ্রামে তিন একর যায়গার ওপর গড়ে তোলেন ‘জাহানারা এগ্রো ফার্ম’। খামারের বয়স এখন এক বছর ৯ মাস। বর্তমানে তার খামারে জিংডিং ও খাঁকি ক্যাম্বেল প্রজাতির প্রায় ৫০০টি হাঁস রয়েছে । এছাড়াও হাঁসের সাথে রয়েছে কার্প জাতীয় বিভিন্ন প্রকেরের মাছ । এর মধ্যে তার প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ হাজার টাকা বা বছরে প্রায় ৩ লাখ টাকা।
লিটুর এমন সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে এলাকার অনেক যুবক । তারাও চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে। তাকে অনুসরণ করে হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। স্থানীয় তরুণদের কর্মসংস্থানেও সহায়তা করছেন তিনি। তার কাছ হাঁসের থেকে বাচ্চা নিয়ে ২০ জন নতুন করে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন।
নিজের এমন সফলতার কথা বলতে গিয়ে লিটু বলেন, আসলে চাকরীর অপ্রতুলত বাজারের পিছনে দৌড়ে বেড়ানোর ফল অনিশ্চিত। নিজেকে প্রতিনিয়ত আত্মনির্ভরশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজ এর মাধ্যমে শুধু আমার একার উপকার নয়, পেরেছি বৃহত্তর এলাকাবাসীর সাহায্য করতে।
তরুণ বেকারদের উদ্দেশ্যে তারিক লিটু আরও জানান, আমি চাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকেরাও যেন নিজেদের মতন করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে। ফলে নিজেদের উপকারের পাশাপাশি দেশেও বেকারত্বের পরিমাণ কমবে। এর জন্য দৃঢ় মনোবল ও পরিশ্রম করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে তারা আরও উৎসাহিত হবে বলে তিনি মনে করেন।
কয়রা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা লিটুর এমন উদ্যোগকে জানান, লিটুর মতন দেশের শিক্ষিত যুবকেরা এগিয়ে আসলে অচিরেই বেকারত্বের কালিমা দূর হবে। এর জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের ওষুধসহ খামার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদিকে হাঁস পালনে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
তারিক লিটু বশেমুরবিপ্রবি প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ০৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।