ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার পরিবার ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী’ শারমিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দু’র্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
কী’ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাকে ডা’কা হয়েছিল, আসছি। কী’ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তা দুদক কর্মক’র্তারা বলবেন।’ সম্রাটের অ’বৈধ টাকায় তার নামে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে কিনা এমন অ’ভিযোগের বিষয়ে শারমিন চৌধুরী বলেন,
‘সম্রাট ও আমিসহ পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্রের শিকার।’ তবে কারা ষড়যন্ত্র করছে, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। সম্রাটের বি’রুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মা’মলায় দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শারমিন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর আগে সম্রাটের ভাই ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকেও একই অ’ভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্ম’দ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে অ’বৈধভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগে সম্রাটের বি’রুদ্ধে দুদক মা’মলা করেছে।
এই মা’মলায় ত’দন্ত কর্মক’র্তা সংশিষ্টদের জিজ্ঞাবাদ করছেন। সম্রাটের আরো অ’বৈধ সম্পদ আছে কি না, তা খোঁজা হচ্ছে। সম্রাট’কে যারা দু’র্নীতি করতে সহায়তা করছে তাদেরও খোঁজা হবে।’ তবে সম্রাটের ভাই ও স্ত্রী’র কাছে কী’ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যা’বের অ’ভিযানে অ’বৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগো’পনে চলে যান।
এরপর ৭ অগাস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রে’প্তার করে র্যা’ব।
সেদিন বিকালে সম্রাট’কে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অ’ভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অ’ভিযান শেষে গু’লিসহ একটি বিদেশি পি’স্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি ম’দ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নি’র্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যা’বের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাট’কে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রা’ণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদ’ণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আ’দালত। ঢাকার রমনা থা’নায় মা’দক নিয়ন্ত্রণ ও অ’স্ত্র আইনে আরও দুটি মা’মলা করা হয় তার বি’রুদ্ধে।
কারাগারে নেওয়ার দুদিন পর বুকে ব্যথা অনুভব করলে সম্রাট’কে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে এবং পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
সেখানে চারদিন চিকিৎসা দিয়ে ১২ অক্টোবর আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয় সম্রাট’কে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আফজালুর রহমান সে সময় জানিয়েছিলেন, ১৯৯৮ সালে সম্রাটের হৃদপিণ্ডের একটি ভাল্ভ ‘রিপ্লেস’ করা হয়েছিল। হাসপাতা’লে নেওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নতুন কোনো সমস্যা ধ’রা পড়েনি।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর ঢাকার জজ আ’দালত সম্রাট’কে ছয় দিনের রি’মান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিল। সে অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর থেকে তাকে হেফাজতে পাওয়ার কথা ছিল দুদকের। কিন্তু তার আগের দিন ‘বুকে ব্যথা ও শ্বা’সক’ষ্ট’ নিয়ে হাসপাতা’লে ভর্তি হন সম্রাট।
প্রথমে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহম’দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে স্থা’নান্তর করা হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। রমনা থা’নার অ’স্ত্র মা’মলায় গত বছরের ৬ নভেম্বর সম্রাটের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগপত্র দেয় পু’লিশ।
এরপর ১২ নভেম্বর তার বি’রুদ্ধে অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের মা’মলা করে দুদক। ক্যাসিনো চালানোর পাশাপাশি ‘চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির মত অ’পকর্মের’ মাধ্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অ’বৈধ সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগ আনা হয় ওই মা’মলায়। এই মা’মলার ত’দন্তের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সম্রাটের স্ত্রী’ ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো।
এ মা’মলায় রি’মান্ডে নেওয়ার অনুমতি পাওয়ার নয় মাস পর গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতা’লে সম্রাট’কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমা’র ভট্টাচার্য্য বলেন, আ’দালতের আদেশ নিয়ে মা’মলার ত’দন্তের স্বার্থে তাকে হাসপাতা’লে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ত’দন্ত কর্মক’র্তা যদি মনে করেন যে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে, তাহলে পরে তাও করা হবে।
ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের বি’রুদ্ধে সরকারি কর্মক’র্তাসহ প্রভাবশালীদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা ও অন্যান্য অ’বৈধ কর্মকা’ণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অ’বৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অ’ভিযোগে প্রায় ২০০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।