বিবাহবহির্ভূত স’ম্পর্ক নিয়ে কথা উঠলেই সবাই পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ইঙ্গিত করেন। এই ধারণা কিছুটা হলেও ভুল। কারণ বিবাহবহির্ভূত অ’বৈধ স’ম্পর্কের শীর্ষে এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড। দেশটির ৫৬ শতাংশ বিবাহিত দম্পতিই অ’বৈধ স’ম্পর্ক রাখেন।






যু’ক্তরাজ্যের দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট সম্প্রতি এক সমীক্ষায় বিবাহবহির্ভূত স’ম্পর্কের তালিকার কথা জানিয়েছে। তালিকার শীর্ষ দেশ থাইল্যান্ড হলেও অ’পর নয়টি দেশ ইউরোপের। শীর্ষ দশে যু’ক্তরাজ্য থাকলেও যু’ক্তরাষ্ট্র নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে সমীক্ষাটি চালায় দ্য রিচেস্ট ও ম্যাচ ডট’কম।






সমীক্ষার শীর্ষ দশে যু’ক্তরাষ্ট্রের স্থান না হওয়া বিষয়ে রিচেস্ট ডট’কমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮০ শতাংশ যু’ক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বিবাহবহির্ভূত স’ম্পর্ককে মানব ক্লোনিং, আত্মহ’ত্যা ও বহুগামিতার চেয়েও খা’রাপ মনে করেন।






তাইযু’ক্তরাষ্ট্রে একে বলা হয় প্রতারণা। অ’বৈধ স’ম্পর্কের তালিকা নিম্নক্রম অনুসারে শীর্ষ দশটি দেশের তালিকা ও তালিকায় স্থান হওয়ার কারণ দেয়া হলো।
১. ফিনল্যান্ড: ৩৬ শতাংশ। ২০১০ সালের পর থেকে ফিনল্যান্ডে বিবাহিতদের মধ্যে অ’বৈধ স’ম্পর্কের হার দ্রুত বাড়ছে। অনেকের মতে, ফিনল্যান্ডে অনেক সময় অ’বৈধ স’ম্পর্ককে অ’ভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা হয়।






অনেক সময় সামাজিকভাবেও স্বীকৃতি দেয়া হয়। ম্যাচ ডট’কমের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজন পুরুষের অন্তত একজনের সঙ্গে ১০ নারীর স’ম্পর্ক দেখা যায়। নারীদের মধ্যে অ’বৈধ স’ম্পর্কের হার এর চেয়েও বেশি।






২. যু’ক্তরাজ্য: ৩৬ শতাংশ। যু’ক্তরাজ্যে অ’বৈধ স’ম্পর্কের হার ফিনল্যান্ডের সমান। তবে যু’ক্তরাজ্যেবাসীর মধ্যে স’ম্পর্কের কারণে অনুশোচনা দেখা যায়। অ’বৈধ স’ম্পর্কের কথা স্বীকার করা অর্ধেক ব্যক্তি এজন্য অনুশোচনায় ভোগেন। এই অনুশোচনা বোধের হার ফরাসিদের দ্বিগুণ। অনেকে মনে করেন, সমীক্ষায় রাজপরিবারকে যু’ক্ত হলে যু’ক্তরাজ্যের অবস্থান আরো ওপরে হতো।






৩. স্পেন: ৩৯ শতাংশ। ঐতিহ্যগতভাবেই স্পেনে ক্যাথলিক প্রভাব বেশি। তাই সামাজিকভাবে অ’বৈধ স’ম্পর্ককে খা’রাপ দৃষ্টিতেই দেখা হয়। তবে বিবাহবিচ্ছেদের হার এখানে ৬০ শতাংশ। বিচ্ছেদের আগেই অন্য স’ম্পর্কে যু’ক্ত হওয়ার কারণেই অ’বৈধ স’ম্পর্কের হার বেশি হতে পারে।






৪. বেলজিয়াম: ৪০ শতাংশ। বেলজিয়ামের সঙ্গে ফ্রান্সের ঘনিষ্ঠ স’ম্পর্ক। মানুষের চিন্তাধারায়ও মিল পাওয়া যায়। দেশটিতে বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে অনলাইট ডেটিং সাইটের বেশ জনপ্রিয়তা দেখা যায়। দেশটির একটি শীর্ষ ডেটিং সাইটে এই সংখ্যা ১০ লাখ। অর্থাৎ, দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই অ’বৈধ স’ম্পর্কে যু’ক্ত।






৫. নরওয়ে: ৪১ শতাংশ। নরওয়ের আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত অ’বৈধ স’ম্পর্কের হার পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে অনলাইনে অ’বৈধ স’ম্পর্ক স্থাপনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাহকের সংখ্যা ৭৮ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু শীতকালে নরওয়েবাসী অ’বৈধ স’ম্পর্কের চেয়ে নিজের বাড়িতে থাকাকেই প্রাধান্য দেন।






৬. ফ্রান্স: ৪৩ শতাংশ। বিশ্বের অনেক দেশেই বিবাহবহির্ভূত স’ম্পর্ককে অ’তটা খা’রাপ ধ’রা হয় না। ফ্রান্সের কথাই ধ’রা যাক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক তরুণীর স’ম্পর্ক প্রকাশ পেলে বিশ্বজুড়েই তা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। তবে ফ্রান্সে বিষয়টি ততটা আ’লোচিত হয়নি। তবে ফ্রান্সের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মা’থায় রাখতে হবে, এখানে ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’র মতো অ’তিমাত্রায় রগরগে চলচ্চিত্রকেও ১২ বছর বা তদূর্ধ্বদের জন্য উপযু’ক্ত ঘোষণা করেছে। বিবাহবহির্ভূত স’ম্পর্কের ক্ষেত্রে ফরাসিদের প্রথম না হওয়াকে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। অধিকাংশ ফরাসি মনে করে, বিবাহবহির্ভূত স’ম্পর্ক থাকা খা’রাপ কিছু নয়। ৬৩ শতাংশ ফরাসি মনে করেন, স’ম্পর্কের বিষয়ে সৎ না থেকেও একজনকে ভালোবাসা সম্ভব। অ’বৈধ স’ম্পর্কের বিষয় স্বীকার করে অনুশোচনা করার হার মাত্র ২৮ শতাংশ।
৭. জার্মানি: ৪৫ শতাংশ। বিবাহিত স’ম্পর্ককে ফরাসিদের চেয়ে গুরুত্ব দেন জার্মানরা। তবে তাদের মধ্যে অ’বৈধ স’ম্পর্কের হারও বেশি। অ’বৈধ স’ম্পর্কের কথা স্বীকার করা ৪০ শতাংশ পুরুষ এ জন্য অনুশোচনা করেন। জার্মান নারীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪৩ শতাংশ।
৮. ইতালি: ৪৫ শতাংশ। ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রীই অ’বৈধ স’ম্পর্কের জন্য বিশ্বজুড়ে সমালোচিত। অষ্টাদশ শতাবব্দীতে অ’বৈধ স’ম্পর্কের জন্য আ’লোচিত ক্যাসানোভা কাহিনীয় ইতালিরই। সেই দেশের মানুষ বিশ্বতালিকায় বৈধ স’ম্পর্কে তৃতীয় হওয়া অ’তি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু ইতালিতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেশ কম। অর্থাৎ, অনেক ক্ষেত্রেই অ’বৈধ স’ম্পর্ককে সামাজিকভাবে মেনে নেওয়া হয়।
৯. ডেনমা’র্ক: ৪৬ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপের বিবাহবহির্ভূত অ’বৈধ স’ম্পর্কের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল ডেনমা’র্কের কোপেনহেগেন। তবে, সম্প্রতি শহরটি এই গৌরব (?) হারিয়েছে। ডেনমা’র্কের অনলাইন ডেটিংয়ে বিবাহিত নারীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।
১০. থাইল্যান্ড: ৫৬ শতাংশ। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টের (যৌ’নপল্লী) সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটির অর্থনীতির একটি বড় আয় আসে এই খাত থেকে। থাই বিবাহিত নারীপুরুষের মধ্যে অ’বৈধ স’ম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার হার বিশ্বের সর্বোচ্চ ৫৬ শতাংশ। থাইল্যান্ডের অনেক সমাজে পুরুষের সঙ্গে স্ত্রী’ ব্যতীত স’ম্পর্ককে খা’রাপ চোখে দেখা হয় না। এ ছাড়া ধনীদের মধ্যে মিয়া নোয়িস নামক একটি প্রথার মাধ্যমে স্ত্রী’ ব্যতীত অন্য নারীর সঙ্গে স’ম্পর্ককে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে।